প্রতিনিধি, মেহেরপুর: শ্রাবণেই ‘বসন্ত’ নেমে এসেছে বাংলায়। তারুণ্যের রক্তে রাঙা বসন্তের ফুল আজ রঙে রঙিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। ছাত্র-জনতার জয়ের হাসি ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। আন্দোলনের সময় গুলির সামনে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ, আলোচিত নানা স্লোগান, গুলিবিদ্ধ ছাত্রের মর্মস্পর্শী কথা আর স্মৃতি এখন ফুটে উঠছে মেহেরেপুরের দেয়ালে দেয়ালে। রংতুলির মাধ্যমে তা ফুটিয়ে তুলছেন দেশ কাঁপানো শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মেহেরপুর জেলা শাখার পক্ষথেকে ”মেহেরপুর ভাবনা” উদ্যেগে বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে দেয়ালে রঙিন সব ছবি এঁকেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পুনঃসংস্কার এবং বিজয়ের গ্রাফিতি কর্মসূচি নিয়ে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং দেয়াল রং করার আহ্বান জানিয়ে এই পোস্ট দেয় মেহেরপুরে ভাবনা ; যা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
মেহেরপুর শহরের মোড়ে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দেয়াল ছিল স্যাঁতসেঁতে আর পোস্টারে ঢাকা। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সৌন্দর্য হারায় এই দেয়াল। শিক্ষার্থীরা শুরুতেই সাদা রং দিয়ে পরিষ্কার করেন এই দেয়াল। তারপর ছবির আঁকার মাধ্যমে আন্দোলনের দৃশ্যচিত্র ফুটিয়ে তোলেন। আঁকা হয় জাতীয় পতাকা। লেখা হয় আন্দোলনে মারা যাওয়া ছাত্রদের নাম।
দেয়ালে দেয়ালে ছিল নানা স্লোগান। ‘স্বাধীনতা এনেছি যখন, সংস্কার করি’, ‘ইতিহাসের নতুন অধ্যায় জুলাই ২৪’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো জুলাই’, ‘আমাদের দেশের ভাগ্য আমরা পরিবর্তন করব’, ‘আমাদের দেশ আমাদেরই গড়ে নিতে হবে, পিণ্ডির গোলামি ছেড়ে দিতে হবে’।
‘ভাই কারও পানি লাগবে, পানি…,’ কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমানের (মুগ্ধ) এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আন্দোলনে মৃত্যু হলেও মুগ্ধর এমন কথা ভুলে যাননি আন্দোলনকারীরা। পরবর্তী কর্মসূচিগুলোতে বারবার ফিরে আসে ‘পানি লাগবে পানি…’। বিজয়ের পরও তা স্মৃতিতে গেঁথে রয়েছে আন্দোলনকারীদের মধ্যে। সাদা দেয়ালে রক্তে রাঙা লাল কালি দিয়ে তাই লেখা হয়েছে, ‘পানি লাগবে পানি…’।
শিক্ষার্থীরা বলেন ‘আমরা সবাই মিলে এই আন্দোলন করেছি। সাধারণ মানুষও যুক্ত হয়েছিলেন। নগরের দেয়ালগুলোতে নানা ধরনের লেখা ছিল, যা দৃষ্টিকটু ও সমীচীন নয়। তাই এসব লেখা মুছে নতুন করে রাঙানোর কাজ করছি। তুলে ধরছি আন্দোলনের নানা স্মৃতি। যাতে পথচলতি শিশু-কিশোর থেকে বয়স্ক—সবাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি ভুলে না যান, সে জন্য গ্রাফিতি আঁকছি।’
আর শিক্ষার্থীরা একটি সুন্দর বাংলাদেশের জন্য আন্দোলন করেছেন। তাই যেকোনো ধরনের ময়লা-আবর্জনা আর খারাপ ধারণা মুছে দিতে চাই। আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিতে চাই।’
