মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর): দেশের অন্যান্য স্থানে প্রবল বর্ষণ ও উজানের পানিতে বন্যা হলেও মেহেরপুর জেলায় খরার কবলে পড়েছে রোপা আমন আবাদ। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকায় জমিতে সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপণ করতে হচ্ছে চাষিদের। ফলে চাষ খরচ বেড়ে গেছে। এদিকে পাট কেটে ধান রোপণ করার জন্য পানির অভাবে পাট কাটতে পারছেন না চাষিরা। ফলে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে শঙ্কায় আছেন চাষি ও কৃষি বিভাগ। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূরক সেচ দিয়ে রোপা আমন আবাদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
মেহেরপুর কৃষি বিভাগের হিসাবমতে, জেলার তিনটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে। আমন মৌসুমে সাধারণত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে চাষিরা ধানের আবাদ করে থাকেন। কাক্সিক্ষত কৃষি না হওয়ায় চাষিরা বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপণ করছেন। অন্যদিকে পাট জাগ দেয়ার পানি সংকটের কারণে পাট কেটে ধান রোপণ করতে পারছেন না চাষিরা। সেচ দিয়ে ধান আবাদ করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে চাষিদের। অনেকেই ধান চাষ থেকে বিরত থাকবেন বলে জানিয়েছেন। ফলে এবার রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গাংনীর হাড়াভাঙ্গা গ্রামের ধানচাষি জুরাইস উকিল জানান, প্রতি বছর তিনি চার বিঘা জমিতে রোপা আমন আবাদ করেন। এবার বৃষ্টির পানি না পাওয়ায় একটু দেরি হচ্ছে ধানের চারা রোপণে। কৃষি বিভাগ বলছে, সেচ দিয়ে চারা রোপণ করতে, কিন্তু এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে অনেক। এবার তিনি এক বিঘা জমিতে রোপা আমন আবাদ করবেন না বলেও জানান।
পাটকেল পোতা গ্রামের চাষি রফিকুল আলম জানান, তিনি প্রতি বছরই আবাদ করেন। পাট কেটে ওই জমিতে রোপা আমন করেন। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় আমন আবাদ করতে পারছেন না। বাড়ির পাশে ডোবায় পানির ব্যবস্থা করে পাট জাগ দেবেন এবং ওই জমিতে রোপা আমন চাষ করবেন। এতে খরচে বেড়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
চাষিরা জানান, এবার অনাবৃষ্টির কারণে রোপা আমন ধান চাষে দেরি হয়ে গেছে। তার ওপরে ধান চাষে লাভ খুবই কম। গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে বিচালি ও চাল কিনে ভাত খাওয়া কৃষকের পক্ষে কষ্টসাধ্য, তাই লোকসান হবে জেনেও ধান চাষ করছেন কৃষক। এক বিঘা ধান চাষে খরচ হয় ১৫-১৬ হাজার টাকা। ধান হয় ১৮-২০ মণ। ধান কাটার মৌসুমে ধান বিক্রি হয় ৯৫০ থেকে হাজার টাকা মণ। ধানের দাম ১৪-১৫শ টাকা হলে লোকসান থেকে বাঁচবে কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় চাষিদের সম্পূরক সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দেরি হলেও পাট কেটে রোপা আমন চাষ করতে হচ্ছে। তবে কয়েক দিনে যা বৃষ্টিপাত হয়েছে, এক্ষেত্রে নিচু এলাকায় সম্পূরক সেচ না দিয়েও রোপা রোপণ করা যাবে।