Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 5:18 am

মেয়াদ বাড়ল সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর

নিজস্ব প্রতিবেদক : আরেক দফা মেয়াদ বাড়ল সাভারে চামড়া শিল্পনগরীর। ২০০৩ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটির মেয়াদ ও খরচ এরই মধ্যে দুবার বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে এটির দ্বিতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। গতকাল তৃতীয়বারের মতো মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব একনেকে অনুমোদিত হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় এ প্রকল্পের সংশোধনীসহ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের আট প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে একনেকের অন্য সদস্য ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সময় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় প্রকল্প ব্যয়ও ১৭৫ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৮ কোটি টাকায়। নতুন করে এটির বাস্তবায়ন মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হচ্ছে। ২০০৩ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটি ১৫ বছরেও শেষ করতে না পেরে এখন আরও সময় নেওয়া হলো। তবে এবার প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়নি। দ্বিতীয় সংশোধনীর মতো এর ব্যয় প্রায় এক হাজার ৭৯ কোটি টাকাই রাখা হয়েছে।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ী এখানে (হাজারীবাগে) ৫০-৬০ বছর ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। তাছাড়া চামড়া শিল্প সরানো একটি জটিল প্রক্রিয়া, তাই সহজে এক জায়গা থেকে অন্য একটি জায়গায় স্থানান্তর এত সহজ নয়। তাই হাজারীবাগের ব্যবসায়ীদের সাভারের নতুন শিল্পনগরীতে যাওয়ায় দেরি হচ্ছে।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ হাজারীবাগে পরিবেশদূষণের কারণে সাভারে আধুনিক বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাসহ চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার দিক থেকে অন্যতম চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পটি। ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ঢাকার হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প অন্যস্থানে সরিয়ে নিয়ে বুড়িগঙ্গাকে ভয়াবহ দূষণ থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ওই সময় এ কাজে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয় ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু স্থান নির্বাচন ও নকশা প্রণয়নেই কেটে যায় চার বছর। এ সময় প্রতি অর্থবছরই ‘চামড়া শিল্পনগরী ঢাকা’ শীর্ষক এ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। ওই বছরের ১০ অক্টোবর প্রকল্পটি প্রথম সংশোধিত আকারে ফের একনেকে পাস হয়। এ সময় ব্যয়ও বাড়িয়ে ৫৪৫ কোটি টাকা প্রক্কলন করা হয়। কিন্তু ডাম্পিং ইয়ার্ড ও কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। প্রথম দিকে কারখানা মালিকরা সিইটিপি নির্মাণের কথা বললেও পরে সে অবস্থান থেকে তারা সরে আসেন। পরে সিদ্ধান্ত হয়, সরকার সিইটিপি নির্মাণ করবে। একই সঙ্গে সিইটিপি ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের অধীন একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হবে। কিন্তু প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে এ বাবদ কোনো অর্থ বরাদ্দ না রাখায় ফের প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে থাকে।

২০১৩ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কয়েক দফা ফাইল চালাচালির পর সরকারি অর্থে সিইটিপি নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ কাজে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, সে অর্থে সিইটিপি নির্মাণে আগ্রহী কোনো প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল না করায় বিষয়টি ঝুলে যায়। ২০১৩ সালে দ্বিতীয়বার প্রকল্প সংশোধন করে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় এক হাজার ৭৮ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয় ২০০৩ থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। এ অর্থের মধ্যে কেবল সিইটিপি নির্মাণ বাবদ ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে ৬৩৮ কোটি টাকা। বাকি অর্থ জমি অধিগ্রহণ, ভ‚মি উন্নয়ন, ধলেশ্বরী নদীতীরে বাঁধ নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নকাজে বরাদ্দ দেওয়া হয়। নতুন করে সংশোধন প্রস্তাবে এটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হচ্ছে ২০০৩ থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, মামলা আর অভিজ্ঞতার অভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লেগেছে। তাছাড়া দরপত্র নিয়েও অনেক সময় ব্যয় হয়েছে।

গতকাল অনুমোদন হওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্পে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে এক হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। টাঙ্গাইল জেলার ভ‚ঞাপুর উপজেলার অর্জুনা নামক এলাকাকে যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার্থে নদীতীর সংরক্ষণে ব্যয় হবে ২৮১ কোটি টাকা। ওয়েস্ট জোন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও পরিবর্ধন প্রকল্পে ব্যয় হবে এক হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। দেশের আটটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) স্থাপনে ব্যয় হবে ৫৮২ কোটি টাকা। সৈয়দপুর-নীলফামারী মহাসড়ক (আর-৫৭০) প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হচ্ছে ২২৫ কোটি টাকা। নওগাঁ-আত্রাই-নাটোর মহাসড়কে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণে ব্যয় হবে ২০১ কোটি টাকা। জয়পুরহাট-আক্কেলপুর-বদলগাছী এবং ক্ষেতলাল-গোপীনাথপুর-আক্কেলপুর জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণে ব্যয় হবে ৭৪ কোটি টাকা।