মৈনট মূলত পদ্মাপাড়ের একটি খেয়াঘাট। মৈনট ঘাটের এ পাড়ে দোহার, ওপারে ফরিদপুর। এ ঘাট থেকে ফরিদপুরে যাতায়াত করা যায়। যদিও স্থানীয়রা মৈনট ঘাটের নাম দিয়েছে মিনি কক্সবাজার। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের যে অপার সৌন্দর্য রয়েছে তার কিছুটা পাওয়া যায় মৈনট ঘাটে।
এখানে আসলে প্রথমে চোখে পড়ে দুই পাশের চর, বিস্তীর্ণ জলরাশি ও বেলাভূমি। জেলেদের রঙ-বেরঙের নৌকাগুলো নজর কাড়ে। উত্তাল পদ্মার ছোট বড় ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে পাড়ে, যা অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি করে। ঢেউয়ের তালে নৌকাগুলো দোল খায়। দর্শনার্থীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে পানিতে। ঢেউয়ের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠে তারা।
এখানে খুব ভোরে ইলিশের বাজার বসে। শুধু ইলিশ বললে ভুল হবে, বিভিন্ন ধরনের মাছের পসরা সাজিয়ে জেলেরা বসে থাকেন। তাজা ইলিশ কিনতে অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এখানে আসে। বর্ষাকালে বেশ জমজমাট থাকে মৈনট ঘাট। বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা আসেন তখন। তাছাড়া ছুটির দিনগুলোয় উপচেপড়া ভিড় থাকে। শহুরে ব্যস্ততার ফাঁকে একরাশ প্রশান্তির আশায় পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, প্রিয়জনকে নিয়ে অনেকেই ছুটে আসেন মৈনট ঘাটে। কেউবা বাসে করে, কেউবা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে। অনেকেই মোটরসাইকেলে চড়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে আসেন।
মৈনট ঘাটের অন্যতম আকর্ষণ নৌ-ভ্রমণ। পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের তালে নৌ ভ্রমণ খুব ভালো লাগবে। মৈনট ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর জন্য স্পিডবোট, ট্রলার ও খেয়া নৌকা আছে। ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া নিলে একটি স্পিডবোটের ভাড়া পড়বে ২৫০০ টাকা। স্পিডবোট চর ভদ্রাসন নিয়ে যাবে। সেখান থেকে ফিরিয়ে আনবে। চরভদ্রাসন যেতে ১৫ মিনিট লাগে। তবে স্পিডবোটে আটজনের বেশি উঠা যাবে না। কেউ আলাদা যেতে চাইলে জনপ্রতি ৩২০ টাকা করে দিতে হবে। সংখ্যায় বেশি হলে ট্রলার ভাড়া নিতে পারেন। একটা ট্রলারে ২০ থেকে ২২ জন বসা যায়। ভাড়া পড়বে ৬০০ টাকা। এছাড়া খেয়া নৌকা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
ছোট কয়েকটি রেস্তোরাঁ আছে। ইলিশ ভাজা, বড় চিংড়িসহ সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছের স্বাদ নিতে পারবেন। দামও আয়ত্তের মধ্যে। এখানে আসলে ইলিশ ও চিংড়ি খেতে ভুলবেন না।
বিকেল বেলা মৈনট ঘাট একটু বেশি জমজমাট থাকে। বিকেলের সোনারোদে বালিগুলো চিকচিক করে। গৌধুলীর সময় একটা রোমান্টিক আবহ বিরাজ করে। আকাশ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে, সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়তে শুরু করে। এ সময় কেউ শরীর এলিয়ে দিয়ে বসে পড়ে। কেউবা ঢেউয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছে নিজেকে। পদ্মার কলকল ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠে চারদিক। মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্ত হƒদয়ে দাগ কাটবে নিশ্চিত। এ রকম পরিবেশে প্রিয়জনের হাত ধরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হবে।
মৈনটঘাটের আশপাশে আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। নবাবগঞ্জের জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, আনসার ক্যাম্প, খেলারাম দাতার বাড়ি, হাছনাবাদ জপমালা রানির গির্জা, আলালপুর তাঁতপল্লী, কোলাকোপা গান্ধী মাঠ প্রভৃতি। ঘাটে যাওয়ার পথে স্থানগুলো দেখে আসতে পারেন।
যেভাবে যাবেন
গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার থেকে যমুনা পরিবহনে পড়ে সরাসরি দোহারের মৈনট ঘাটে চলে যাবেন। ভাড়া জনপ্রতি ৯০ টাকা। দুই ঘণ্টার মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। মনে রাখবেন মৈনট ঘাট থেকে গুলিস্তানের উদ্দেশে সর্বশেষ গাড়ি ফিরে বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে।
যেখানে থাকবেন
এখানে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো আবাসিক হোটেল এখনও গড়ে উঠেনি। তাই দিনে এসে দিনে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করবেন।
সতর্কতা
যারা সাঁতার জানেন না তারা লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। পদ্মার উত্তাল ঢেউ মাঝেমাঝে বড় আকারের হয়ে আসে। একটু অসচেতনতায় দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন। নৌকা নিয়ে খুব দূরে যাওয়ার দরকার নেই। পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতলসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু পানিতে ফেলবেন না।
ইট-পাথরের দেয়ালে থাকতে থাকতে হাঁফিয়ে উঠলে একবারের জন্য ঘুরে আসুন মৈনট ঘাট থেকে। রাজধানী থেকে খুব ভোরে রওনা দিতে হবে।
তারেকুর রহমান