নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে ঝড়-বৃষ্টি, কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড় এপ্রিল থেকে শুরু হলেও মে মাসকেই ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস বলা হয়। কারণ গত ৩৩ বছরে সাগরে ১৭টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশিরভাগই বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্ব ও মিয়ানমার উপকূল দিয়ে অতিক্রম করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতের মতো এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় পরিণত হতে পারে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিসের মডিউল অনুযায়ী সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখার দৃষ্টি দেশের দক্ষিণপূর্ব ও মিয়ানমার উপকূলের দিকে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, আবহাওয়ার বিভিন্ন চারিত্রিক পরিবর্তনের ফলে বিশ্বে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করার সময় ঘূর্ণিঝড়ের নানা চারিত্রিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। উপকূল অতিক্রম করার সময় কোনো কোনো ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতি কমেছে, আবার কোনোটির বাড়ছে। বডি পার্ট অতিক্রম করা ঘূর্ণিঝড় কখনও কখনও স্বতন্ত্র চরিত্র প্রকাশ করছে। এজন্য কোনো কোনো ঘূর্ণিঝড় অতি তীব্র বেগেও উপকূল অতিক্রম করে, আবার কোনো কোনো ঘূর্ণিঝড় দুর্বলভাবে অতিক্রম করে।
তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ২০০ কিলোমিটার দূরে সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় গত ৩ মে আরএসএমসি, ভারতের আবহাওয়া সংস্থা এবং বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরে একটা সতর্কবার্তা দেয়। সতর্কবার্তায় তারা জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের ঠিক দক্ষিণে আগামী ৭ অথবা ৮ মে লঘুচাপটি সৃষ্টি হবে এবং ৯ মে এটি নি¤œচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যখনই নি¤œচাপ হবে, তখনই ঘূর্ণিঝড়ের জীবনকাল শুরু হবে।
বিশ্বের আবহাওয়া পূর্বাভাস দেয়া সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ পাঁচ দিন আগে মোটামুটি নির্দিষ্টভাবে পূর্বাভাস দিতে পারে। কারণ পাঁচ দিনের বেশি আগে পূর্বাভাস দিলে তার কার্যকারিতা পাওয়া যায় না। সেই কারণে আরএসএমসি, ভারতের আবহাওয়া অফিস এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামীকাল লঘুচাপ সৃষ্টির বিষয়টি জানিয়ে এটি পরবর্তী সময়ে নি¤œচাপে পরিণত হবে বলে জানিয়েছে। এ সংস্থাগুলো নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছে, তারা বিষয়টি নিয়ে প্রতিদিনই জানাবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এটি নি¤œচাপে পরিণত হবে এবং বিভিন্ন মডেলের তথ্যমতে, এটি ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে বলে জানা গেছে।
এর আগে মে মাসে আইলা, মহসেন ও আম্ফান সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে ১৭টা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ১৭টির মধ্যে বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড়ই বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্ব এবং মিয়ানমারের উপকূল দিয়ে অতিক্রম করেছে। বর্তমানে আমাদের মডেল অনুযায়ীও সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ও এ পথ দিয়ে অতিক্রম করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।