ঢাকার পতিত নগর পরিসরে সহসা রাজধানী জেগে ওঠায় আবাসন ও নির্মাণ খাত হয়ে উঠেছিল অনিবার্য। সেই বাতাবরণে জহুরুল ইসলামের সৃজনী পদক্ষেপ ছিল তুরুপের তাস। ক্ষুদ্র ঠিকাদারি দিয়ে শুরু। দেশের সীমানা মাড়িয়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে তিনি গড়েছেন আকাশচুম্বী অট্টালিকা, সড়ক-মহাসড়ক, কল-কারখানা; এমনকি দেশের আঙিনায় বুলন্দ করেছেন বিদেশি বড়-প্রসিদ্ধ বাণিজ্যিক ও শৌখিন গাড়ির সমৃদ্ধি। রাজধানী ঢাকার নির্মাণ, আবাসন ও বিস্তৃতির বিবর্তনিক ইতিহাসের ধারাক্রমে জহুরুল ইসলাম তাই এক অবিচ্ছেদ্য প্রাসঙ্গিকতা। পর্ব-১২
মিজানুর রহমান শেলী: মুসলিম আমলের আগ অবধি ঢাকার আবাসন অবকাঠামো নিয়ে বিশদ বর্ণনা দেওয়া দুরূহ। সুলতানি আমল থেকেই এটা রাজধানীঘেঁষা। আবার মোগল আমলে এটা প্রাদেশিক মর্যাদা লাভ করে। এরপরে আসে কোম্পানি ও ব্রিটিশের শোষণ। ফলে ১৮০০ সালের আগে-পড়ে দু’পর্বে ঢাকার ইতিহাসকে মূল্যায়ন করা চলে। কার্যত এই শহরের বিবর্তন এবং বিশেষ করে আবাসিক বা জীবনযাপনের ওপর এখানে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সুলতানি আমলে সোনারগাঁয়ে রাজধানী হওয়ায় ঢাকা বাণিজ্যিক ও জীবন মানের উন্নয়ন দেখা দিয়েছিল। তবে ঢাকার প্রসিদ্ধি লাভ করে মোগল আমল থেকে। এ সময় থেকেই এখানকার আবাসন খাতে তেমন উন্নয়ন হয়নি। তখন এখানে কার্যত যাপিত জীবনে গ্রাম্য ধারাই চলমান ছিল। তবে রাজরাজরাদের ঘিরে স্থাপত্যিক কাঠামো গড়ে উঠতে থাকে চমৎকার রীতি-নন্দন অবয়বে। এর মধ্যে মসজিদটিকে বিশেষ গুরুত্বের স্থানে রাখা চলে। জোয়ার দি বারোস তার ১৫৫০ সালের মানচিত্রে ঢাকাকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে উল্লেখ করেন। আকবারনামায় এটি ছিল সামরিক ফাঁড়ি। ১৬১০ সালে ইসলাম খাঁ চিশতি এখানে সুবাহ বাংলার রাজধানী স্থাপন করেন। আর সম্রাটের নামানুসারে এর নাম হয় জাহাঙ্গীরনগর। তবে সাধারণের মুখে ঢাকা নামটিই চালু ছিল। এই ঢাকা বা ভাটি থেকে মোগলদের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে বিদ্রোহ হতো। তাই এখানে ইসলাম খাঁকে দিয়ে ঢাকা দুর্গ স্থাপন করা হয়। পরে এখানে একটি আবাসন গড়ে তোলার প্রয়োজন দেখা গেল।
ইটের আবাসন বলে কথা নয়। বরং সুবাহদারের বাসস্থান উপযোগী একটি বাসস্থান ইসলাম খাঁ গড়ে তোলেন। বর্তমানে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে এই দুর্গের অস্তিত্ব চিহ্নিত হয়।
প্রাচীনকালে ঢাকা বলতে ছিল পাকুড়তলী। বর্তমানে এর নাম বাবুবাজার। এই বাবুবাজারের সীমিত এলাকাজুড়েই ছিল ঢাকা শহর ও তার নগর জীবন। এখানেই সাধারণ বা লোকজীবন ধীরে ধীরে নগর জীবনে বিবর্তন হয়েছিল। তবে জীবনের আচার ও আবাসন কাঠামোর রূপ পরিবর্তনের ধারায় ধীরে ধীরে এর পরিধিও বাড়তে থাকে। মোগল সুবাহ ইসলাম খাঁর রাজধানী হিসেবে এর পরিধি বিস্তার লাভ করতে থাকে। ফলে বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষে শহরটি পশ্চিমে ঢাকা দুর্গ থেকে সদরঘাট অবধি বাড়তে থাকে।
রাজধানী হওয়ার পরে প্রশাসনিক প্রয়োজনে এর পরিধি বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়ে। ফলে সেনা ছাউনি গড়ে ওঠে উর্দু রোডে। একইভাবে সে সময়ের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে স্থানের নামও এখন অবধি জড়িয়ে রয়েছে। দিউয়ান বাজার, বকশীবাজার, মোগলটুলী, হাজারীবাগ, পিলখানা, অতীশখানা, মাহুৎটুলী ইত্যাদি নামের সঙ্গে কর্মযজ্ঞ ও যাপিত জীবনের পরিচয় ফুটে ওঠে। কেননা এখানেই মোগল সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানে বসবাস করেছেন।
তাছাড়া পেশা জীবন ও বাণিজ্যও এলাকার কিছু নামকে প্রভাবিত করে স্পষ্টভাবে। যেমন কায়েৎটুলী থেকে মোগল কায়েৎ বা কায়োস্তদের আবাসনের পরিচয় বহন করে। তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, বানিয়ানগর, কামারনগর প্রভৃতি নামের সঙ্গেও রয়েছে হিন্দু পেশাজীবী মানুষের আবাসন ইতিহাস। তবে গঞ্জযুক্ত নামের স্থানগুলো বাণিজ্যিক প্রয়োজনে গড়ে ওঠে। যেমন নওয়াবগঞ্জ ও আলমগঞ্জ। এর পাশাপাশি জমিদারদের এলাকাও বিভিন্ন স্থানের নামের সঙ্গে সন্ধিবদ্ধ। যেমন বেচারাম দেউড়ি, মীর জামাল দেউড়ি। দেউড়ি ছিল এমন এক স্থাপত্যিক কাঠামো যেখানে জমিদারি কার্যক্রম পরিচালিত হতো। রাজধানী প্রতিষ্ঠার পরে সেবাস্টিয় ম্যানারিকের ১৬৪০ সালের বর্ণনায় পাওয়া যায়, তখন ঢাকা ছিল পশ্চিমে মানেশ্বর থেকে পূর্বে নারিন্দা, উত্তরে ফুলগাড়ি, যা বর্তমানে ফুলবাড়িয়া। এর দৈর্ঘ্য ছিল দেড় লিগ বা সাত কিলোমিটার। অর্থাৎ ইসলাম খাঁর এই ঢাকায় ১৬১০ পরবর্তী ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে।
তবে ১৬৬৩ সালে মানুচির কাছে ঢাকাকে ছোট শহর মনে হয়েছিল। ১৬৬৬ সালে টেভার্নিয়ার বড় শহর বলেছেন। তবে তিনি দৈর্ঘ্যরে বিশালতা বর্ণনা করেন। দুই লিগের বেশি বা সাড়ে ৯ কিলোমিটারের কথা উল্লেখ করেন। ১৬৬৯-৭০ সালের টমাস বাউরির বর্ণনায় ঢাকা ছিল সুপ্রশস্ত। চারপাশে এর পরিধি ৪০ কিলোমিটারের কম নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে বাউরি শহর ও শহরতলিকে একসঙ্গে যুক্ত করে বর্ণনা করেন। কেননা তিন বছরের ব্যবধানে শহরটি এত বিস্তার লাভ করার কথা নয়। এমনকি তিনি বর্ণনা করেন এত বড় এলাকার মধ্যে কেবল নি¤œ জলাভূমিতেই কেবল শহরবাসীর আবাসন গড়ে উঠেছিল। আবার টেভার্নিয়ার বলেন, এখানকার বাসিন্দারা নদীতীরে আবাসন গড়ে তোলায় আগ্রহী ছিলেন।
তবে মানুচি এখানে প্রচুর মানুষের আবাসন উল্লেখ করেন। এই কথার সঙ্গে ১৬৬৬ সালের পর্যটক টেভার্নিয়ারের বর্ণনা মিলে যায়। টেভার্নিয়ার জনবহুল এলাকা বলে উল্লেখ করেন।
মানুচির মতে, এখানে বেশিরভাগ ঘরবাড়ি ছিল খড়ের তৈরি। এই বর্ণনাটির সঙ্গে ১৯১২ সালের বিসি এলিয়েনের বর্ণনা মিলে যায়। বিসি এলিয়েনও এখানে খড় বা কাশের ছাউনিযুক্ত ঘরের কথা উল্লেখ করেন। তবে বিশ-উনিশ শতকের শেষের ভাগ ও বিশ শতকের শুরুতে এলিয়েনের বর্ণনায় টিনের ছাউনির বর্ণনা এসেছে। এখানে উল্লেখ করতে হয় মানুচি কিংবা বিসি এলিয়েনের খড়ের ঘরের বর্ণনাটা কেবলই সাধারণ লোকজীবন ঘনিষ্ঠ।
প্রাদেশিক রাজধানীর শিল্প বাণিজ্যের কেন্দ্রভূমিভিত্তিক পুরান ঢাকার গৌরব ১৮ শতকে কিছুটা ম্লান হয়ে পড়ে। এ সময় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো তেজগাঁও অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য হারে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে থাকে। ফলে ঢাকা ধীরে ধীরে উত্তর দিকে বিস্তার লাভ করতে থাকে। ১৭৮৬ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঢাকা শহরের সীমানা দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা, উত্তরে টঙ্গী-জামালপুর, পশ্চিমে মিরপুর ও পূর্বে পোস্তগোলা পর্যন্ত নির্ধারণ করেন। কোম্পানি আমলের এই ঢাকার বর্ণনা জন টেইলর দিয়েছেন। তিনি ছিলেন ঢাকার একজন আবাসিক বণিক। তার বর্ণনায়, দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা, উত্তরে টঙ্গী, পশ্চিমে জাফরাবাদ ও পূর্বে পোস্তগোলা। টেইলরের এই সীমানা চারপাশে আনুমানিক ৪০ কিলোমিটার। ১৬৬৯-৭০ সালে টমাস বাউরির দেওয়া আনুমানিক ৪০ কিলোমিটারের দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়।
১৬১০ থেকে প্রায় ১৭১০ পর্যন্ত এই ঢাকায় ছিল বড় বড় প্রশাসনিক দফতর, সুবাদার ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসস্থল। তাই ওই ১০০ বছর ধরে ঢাকায় প্রশাসনিক দফতর ও কর্মকর্তাদের আবাসন স্থাপত্য গড়ে ওঠে।
শাসনকেন্দ্র ও সুবাহদারের অভ্যর্থনার প্রয়োজনে ইসলাম খাঁ ঢাকায় একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। এ সময় ঢাকায় ইটের তৈরি দুর্গ সহজেই নির্মাণ হতে পারত। সেই চল ছিল। কিন্তু তা সম্ভবত কাদামাটিতে নির্মাণ করা হয়েছিল। এর প্রাচীরও ছিল কাদামাটির। কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে এখানে সুবাহদারদের বসবাস উপযোগী করে তোলা হয়। উল্লেখ্য, ঢাকায় প্রেরিত মোগল সুবাহদাররা সাধারণত তাঁবুতে বাস করত। কেননা তারা সাময়িক ও বদলিযোগ্য হিসেবে নিযুক্ত হতেন। তাই সুবাহদারের বাড়ি বানানোতে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। ১৬৭৮-৭৯ সালে শাহজাদা আজম ঢাকার একমাত্র দুর্গ লালবাগ বা আওরঙ্গবাদ নির্মাণে হাত দিলেও তার শেষ নামাতে পারেননি। ইসলাম খানের সময় এ দুর্গ ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ ছিল বুড়িগঙ্গার তীরে চাঁদনী ঘাট। রাজকীয় নৌবহর চলত এখানে। তাছাড়া সামরিক ও নৌসেনাদের অবতরণ স্থল ছিল এটি।
শাহ সুজার দিউয়ান মীর আবুল কাশিম ১৬৪৫ সালে বড়কাটরা নামের সুপ্রশস্ত ইমারত প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বুড়িগঙ্গার তীরে। চকবাজারের দক্ষিণে। পরিদর্শনকারী বণিকদের জন্য অতিথিশালা হিসেবে এটি দান করা হয়েছিল। তাই এটাকে কাটরা বলার চল শুরু হয়। মীর আবুল কাশিম পিলখানার উত্তরে মোহাম্মাদপুরে সাতমসজিদ যাওয়ার পথে একটি প্রশস্ত ঈদগাহ নির্মাণ করেন। ১৬৪৯ সালে মোগল কর্মকর্তা চকবাজারের কাছে চুরিহট্টায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। নাওয়ারার (নৌবাহিনী) দারোগা মুহাম্মাদ মুকিম ১৬৬২ সালে একটি কাটরা নির্মাণ করেন। বর্তমানে এটি কেন্দ্রীয় কারাগারের পূর্বে প্রধান ফটকের পেছনের অবস্থিত। আজকের রমনা গেট হলো সেকালের মীরজুমলা গেট। কার্জন হলের কাছে এই গেটটি তিনি মগ দস্যুদের আক্রমণের হাত থেকে শহর রক্ষার জন্য নির্মাণ করেন। সড়কপথে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো ও রাজধানীকে নিরাপত্তা দিতে তিনি দুটি সড়ক ও কয়েকটি দুর্গ নির্মাণ করেন। এর একটি সড়ক ময়মনসিংহ রোড উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকাকে যুক্ত করে। এটি টঙ্গী-জামালপুরের একটি দুর্গকে সংযুক্ত করে। তুরাগ নদীতীরে টঙ্গী ব্রিজ নির্মাণ করেন। অন্যটি ফতুল্লার (প্রাচীন দাপা) সঙ্গে ঢাকাকে সংযুক্ত করে। এখানে ছিল দুটি দুর্গ। সড়কটি খিজিরপুর পর্যন্ত এগিয়ে যায়। সেখানেও ছিল আরেকটি দুর্গ। ফতুল্লার কাছে পাগলা ব্রিজটিও করেন মীরজুমলা।
এরপর সুবাহদার শায়েস্তা খানের নির্মাণ ইতিহাস বলতেই হয়। তিনি কাঠ দিয়ে রাজপ্রাসাদ বানান। তিনি ঢাকার ছোটকাটরা নির্মাণ করেন। বেশ কয়টি মসজিদ ও সমাধিসৌধ গড়েন। চকবাজার মদজিদ, বাবুবাজার মসজিদ ও সাতগম্বুজ মসজিদ তারই কীর্তিকর্ম। বিবি পরীর সমাধিই তার সমাধির মধ্যে প্রসিদ্ধ। এছাড়া বিবি চম্পা, দারা বেগম প্রভৃতি সমাধিসৌধ তিনি নির্মাণ করেছিলেন। তার নির্মাণরীতির স্বকীয়তা ছিল বলে ‘শায়েস্তা খানি রীতি’ নামে নতুন স্থাপত্য রীতির পরিচয় পায় এই ঢাকা শহর।
কারওয়ান বাজারে খাজা আম্বর একটি কূপ, একটি সরাই, একটি সেতু ও একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। একজন ব্যবসায়ী পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকাকে সংযুক্ত করতে প্রয়াসী হন। তাই তিনি দোলাইখালের ওপর নির্মাণ করেন নারিন্দা সেতু। এই সময়েই লালবাগের দুর্গটি নির্মিত হয়। নাম ছিল আওরঙ্গবাদ দুর্গ। শাহজাদা আজমের কাজ শেষ করতে পারেননি। তবে কয়েকটি সুন্দর ইটের ইমারত তৈরি করেন। মসজিদ, বিবি পরীর সমাধি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। শাহজাদা আজিমুদ্দিন পোস্তায় (পোস্তা-কিল্লা) নির্মাণ করেন একটি প্রাসাদ। তবে তা টিকে নেই। নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। বেগমবাজার মসজিদটি নির্মাণ করেন মুর্শিদকুলী খান। শাহাজাদ ফররুখ সিয়ার পরে যিনি সম্রাট হয়েছিলেন, তিনি লালবাগ দুর্গের দক্ষিণ-পূর্বে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এটিকে বর্তমানে শাহি মসজিদ বলা হয়। খান মোহাম্মাদ মৃধা লালবাগ দুর্গের উত্তর-পশ্চিমে অতীশখানা এলাকায় একটি সমজিদ নির্মাণ করেন।
এরপরে এই ঢাকায় শিয়া মুসলিমদের আগমন শুরু হয়। ফলে তাদের আবাসন ও স্থাপত্য রীতি ঢাকায় পরিচিতি পেতে থাকে। আবার শিয়াদের সংখ্যা যখন দিনে দিনে বাড়তে থাকে তখন তাদের জন্য আলাদা ইবাদাতখানারও প্রয়োজন হয়। এর ধারাবাহিকতায় নির্মিত হয় হোসেনী দালান।
নায়েব নাজিমগণের আবাসন ছিল ইসলাম খানের কিল্লা বা দুর্গ। কিন্তু কোম্পানি আমলে অর্থাৎ আরও নির্দিষ্ট করে বলা চলে ১৭৬৫ সালে তা ইংরেজরা দখল করে নেয়। ফলে তাদের নতুন আবাসন হয় বড়কাটরা প্রাসাদ। তবে তাদের জন্য আলাদাভাবে আবাসন নির্মাণের কথা চিন্তা করা হয়। তখন তাদের নতুন আবাসন নির্মাণ করা হলো, যাকে তখন প্রাসাদ বলে ডাক হতো। এটা ছিল পুরাতন জাদুঘর এলাকায়। প্রাসাদটি বর্তমানে বিলুপ্ত। এর ধ্বংসাবশেষ নিমতলী দেওড়ি আজও আছে। এই ফটকটি এশিয়াটিক সোসাইট বিল্ডিংয়ের অভ্যন্তর ভাগে বর্তমানে রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৭৭২ সাল থেকেই ঢাকা একটি জেলা প্রশাসনের কেন্দ্র ছিল। ইসলাম খানের বাসস্থান ও চাঁদনী ঘাটের মাঝে একটি বাজার বসেছিল। এই বাজারটিকে তখন বলা হতো বাদশাহি বাজার। আর এখন বলা হয় চকবাজার। ১৭২৮ সালে এ বাজারটির যাত্রা শুরু হয়। তখন এ বাজার আয়োজনের কর্ণধর ছিলেন মির্জা লুৎফুল্লাহ, দ্বিতীয় মুর্শিদকুলী খান ও রুস্তুম জঙ্গ।
লেখক: গবেষক, শেয়ার বিজ।