মোগল স্থাপত্যের মূল্যবান কষ্টিপাথরের ফলক চুরি

প্রতিনিধি, শেরপুর: শেরপুরের প্রাচীন মোগল স্থাপত্য ঘাগড়া খান বাড়ি মসজিদের মূল্যবান কোটি টাকা মূল্যের কষ্টিপাথরের খোদাই করে লেখা ফলকটি চুরি হয়ে গেছে। এ চুরির ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। ঘটনার ৫ দিন পরেও চোর চক্রের কোনো হোদিস মেলেনি। এদিকে মসজিদের ওই মূল্যবান কষ্টিপাথরের ফলকটি চুরির ঘটনায় স্থানীয় গ্রামবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, মোগল শাসন আমলের ১৬০৪ খ্রিষ্টাব্দে শেরপুর জেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামে মোগল স্থাপত্যকলার অনুপম নিদর্শন ঐতিহাসিক ‘খান বাড়ি’র মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মসজিদের গায়ে বর্তমানে যেসব নির্দশন পাওয়া গেছে সে অনুসারে ধারণা করা হয়, বক্সার বিদ্রোহীদের নেতা হিরোঙ্গি খাঁর বিদ্রোহের সময় মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। আজিমোল্লাহ খান ৫৮ শতক জায়গার ওপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করে ওয়াকফ করে দেয়। এরপর হেরিটেজ স্থাপত্য হিসেবে মসজিদটি দেখভালের জন্য ২০০৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দায়িত্ব নেন। কিন্তু স্থায়ীভাবে মসজিদটিতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কোনো লোক ছিল না। ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস থেকে মাঝে মধ্যে লোক এসে মসজিদের খোঁজখবর নিতেন। এছাড়া মসজিদের খাদেম ও ইমাম সাহেব থাকতেন মসজিদের বাইরে। ফলে ১৮ ডিসেম্বর রাতের কোনো এক সময় কে বা কারা মসজিদের দরজার ওপরে বাঁধাই করা ওই মূল্যবান কষ্টিপাথরের ফলকটি খুলে নিয়ে যায়। মসজিদটির দরজার ওপর মূল্যবান কষ্টিপাথরের ওপর খোদাই করে আরবি ভাষায় এর প্রতিষ্ঠাকাল এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা উল্লেখ করা হয়েছে। পরে খান বাড়ির উত্তরাধিকারীরাই মসজিদের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ১৯ ডিসেম্বর ভোরে ফজরের সময় নামাজ পড়তে এসে মুসল্লিরা দেখে কষ্টিপাথরের ফলকটি নেই। নিচে সিমেন্ট পড়ে আছে। স্থানীদের দাবি দ্রুত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার এবং মূল্যবান হেরিটেজ ওই কষ্টিপাথরের ফলকটি উদ্ধার করা হয়। চুরির ঘটনাটা জানার পরপরই ১৯ তারিখ সকালে মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম ময়মনসিংহের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানায়। পরে ময়মনসিংহ থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন এবং ঝিনাইগাতী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় জয়নাল আবেদীন বলেন, কষ্টিপাথরের এই ফলকটি প্রায় কোটি টাকা মূল্যের। ৪০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদের চুরির ঘটনায় গ্রামবাসী হতবাক। চোর চক্রকে চিহ্নিত এবং ফলকটি উদ্ধার করে আবার যথাস্থানে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই সরকার এবং প্রশাসনের কাছে।

ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বছির আহমেদ বাদল বলেন, খান বাড়ি মসজিদের নামফলক চুরির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। দেখি আমরা কী করতে পারি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুদ ভূঁইয়া জানায়, চুরি হওয়ার বিষয়টি থানা দেখভাল করবে। তারপরও আমার তরফ থেকে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০