নিজস্ব প্রতিবেদক: মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন কমছে। টানা দুই মাস ধরেই কমছে এ খাতের লেনদেন। চলতি বছরের আগস্ট মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকরা ৮৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা লেনদেন করেছে, যা আগের মাসের থেকে এক হাজার ৭২৩ কোটি টাকা কম। জুলাই মাসে ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধা নিয়ে থাকেন দেশের সব শ্রমজীবী মানুষ। তাছাড়া ব্যাংকের ঝামেলা এড়াতে অনেকেই এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন শুধু টাকা পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে এর মাধ্যমে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বেতনও বিকাশ, রকেট, কিংবা নগদের মতো বিভিন্ন এমএফএস সেবার মাধ্যমে দিয়ে থাকেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে যে লেনদেন হয়েছে, তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ হাজার ২১৭ কোটি টাকা বেশি। গত বছরের আগস্টে লেনদেন হয়েছে ৭১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। টাকা জমা, টাকা উত্তোলন, স্থানান্তর, পরিশোধ, বিল পরিশোধÑসবকিছু মিলেই হিসাব হয় লেনদেনের।
এমএফএসের লেনদেন কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম শেয়ার বিজকে বলেন, ঈদের-পরবর্তী সময়ে লেনদেন কমে যায়, এটা সাধারণ একটা ব্যাপার। কারণ সবসময় ঈদের আগের মাস (জুন) লেনদেনের পরিমাণ বেশি হয়। এসময় মানুষ কেনাকাটা বেশি করে, বেতন-বোনাস হয়। এছাড়া প্রবাসীরা পরিবারের জন্য বেশি টাকা পাঠান। এজন্য ঈদের আগের মাসে লেনদেন বেশি হয় এবং ঈদের পর স্বাভাবিকভাবে এসব কার্যক্রম কমে যায়। ফলে জুলাই-আগস্ট মাসে লেনদেনটা কমে যায়। প্রতি বছর ঈদের পরবর্তী সময়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
বিকাশ, রকেট, নগদ, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩টি এমএফএস সেবার হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুন শেষে এ খাতে নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার ৬১০। এর মধ্যে পুরুষ ১০ কোটি ৬২ লাখ
২০ হাজার ৮৮১ এবং মহিলা গ্রাহক সাত কোটি ৬৫ লাখ ৯৬ হাজার ৩৮২। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩৯৮।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই; বরং এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ এবং মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে। রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন, অর্থাৎ টাকা পাঠানো হয়েছে ২৬ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। আর উত্তোলন করা হয়েছেÑক্যাশ আউট ২৩ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এমএফএস সেবায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২৪ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় দুই হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার দুই হাজার ২৬২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটার তিন হাজার ৩৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
লেনদেন উৎসাহিত করতে সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা দিনে এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ টাকা জমা করতে পারেন।
বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের মার্চে। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। তবে বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে।