মোবাইল ফোন এখন আর শখের কিংবা বিলাসিতার পণ্য নয়। এখন একেকটি মোবাইল ফোন সেট যেন একটি কম্পিউটার। ইন্টারনেট সংযোগ-সংবলিত সেট মানেই হাতের মুঠোয় বিশ্ব। এটি নিছক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এর গুরুত্ব ও বিস্তৃতি এখন এত বেশি যে, এটি ছাড়া এক মুহূর্তও যেন চলতে পারে না বিশ্ব। এমন প্রবাসী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যিনি দেশে স্বজনদের সঙ্গে ইমো, ভাইবার বা স্কাইপেতে কথা বলেন না; ভিডিও কল করেন না।
দেশে ফোরজি সেবা চালু থাকলেও মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটে ভোগান্তি অনেক। সব মোবাইল অপারেটরের সংযোগেই গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কমবেশি। এর মধ্যে গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘বাংলালিংকের ডেটা কিনলেই হাওয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ব্যবহারকারীদের ভোগান্তির বিষয় উঠে এসেছে। যেমনÑ৬৯৮ ও ৮৮৯ টাকার ৩০ দিনের প্যাকেজ শেষ হয়ে যায় ১৫ থেকে ১৮ দিনেই। এভাবে ডেটা ‘হাওয়া’ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাংলালিংক থেকে কোনো সন্তোষজনক জবাব দেয়া হয় না। কখনও নেটওয়ার্কে ভোগান্তি, কখনও ফোরজি সিগন্যাল থাকলেও দেখা যায় না, কখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা যাচ্ছেÑসবখানেই বিড়ম্বনা।
অনেক দিন ধরেই গ্রাহকভোগান্তি কমাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কাজ করছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারে সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ দাম কত হবে, তা ঠিক করা হয়েছে অপারেটরসহ অংশীজনদের সঙ্গে দফায় দফায় মত বিনিময় করেই। ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের সহায়তায় ‘কস্ট মডেলিং’ও করা হয়েছে। আবার সেটি এড়িয়ে গিয়ে মূল্যসীমা নির্ধারণের বিষয়ও বিবেচনায় আনা হয়েছে। কেননা কস্ট মডেলিংয়ে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করলে গ্রাহকের খরচ আরও বেড়ে যাবে।
মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে অবশ্য এগিয়েছে বাংলাদেশ। সেই ২০১৮ সালেই দেশে ফোরজি নেটওয়ার্ক চালু করে কয়েকটি মোবাইল অপারেটর। কিন্তু এর মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্নÑগতি বাড়লেও সুফল পায়নি গ্রাহক; ডেটা উধাও হয়ে যায় অর্ধেক সময়ের আগেই।
বাংলালিংকের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করেও সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। সেখান থেকে বলা হয়, ‘ব্যবহারের ওপর নির্ভর করেই ডেটা শেষ হচ্ছে।’ অথচ গ্রাহক বলছেন, ইন্টারনেট ব্যবহার আগের চেয়ে কমিয়েছেন। বাধ্য হয়েই কমিয়েছেন, কারণ প্রতিটি ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম বেড়েছে। গ্রাহকের ধারণা বাংলালিংক কৌশলে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সুষ্ঠু তদারকি করছে না।
মোবাইল ইন্টারনেটের দাম নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে এবং সেবার মান বাড়াতে তদারকি বিভাগ গঠন করতে পারে বিটিআরসি। এর কাজ হবে গ্রাহকের অভিযোগ যাচাই এবং সেবার মান ঠিক আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা। কিছু দিন আগে ‘গ্রাহকস্বার্থে’ বিটিআরসি তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রাহকরা তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ পুরো ব্যবহার করতে পারেন না, এই যুক্তিতে। এটি প্রশংসনীয়। বেশি ব্যবহার করলে খরচ বাড়বে, তা নিয়ে কারও অভিযোগও নেই; কিন্তু ব্যবহার না করে কেন খরচ বাড়বে, ডেটা উধাও হয়ে যাবে! বিটিআরসির উচিত হবে গ্রাহকের ভোগান্তি নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।