নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী অর্থবছরে যে মোবাইল সেবা ব্যবহারের ওপর অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং সিম সংযোগের ওপর ১০০ টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপ করা হলো। এর ফলে মোবাইল গ্রাহক এবং এই শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর আগে এ ধরনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেবার মূল্য বৃদ্ধি করা হলে গ্রাহকরা মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে দেন। ফলে একদিকে যেমন রাজস্ব আহরণ কমে যায়; অন্যদিকে সরকারের কোষাগারেও প্রদেয় অর্থের পরিমাণ হ্রাস পায়। সিম সংযোগের ওপর প্রদেয় ভ্যাট ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করার কারণে মোবাইল গ্রাহকের প্রবৃদ্ধি অনেক কমে যাবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) বনানীর অফিসে আয়োজিত এ সম্মেলনে অপারেটরের প্রতিনিধিরা সদ্য প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় অংশ নেন বাংলালিংক ডিজিটালের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হ্যান্স মার্টিন হেনরিক্সন এবং অ্যামটব মহাসচিব লে. কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার (অব.)।
মোবাইল খাতের নতুন করে করারোপ না করে তাকে যৌক্তিক অবস্থায় আনতে এনবিআরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকারের কাছে বারবার অনুরোধ করা হলেও, এবার সরকার কর বৃদ্ধি করল অর্থনীতিতেÑযার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলে আমরা মনে করি। এর আগে আমরা সরকারের কাছে সুপারিশমালা তুলে ধরেছিলাম কিন্তু তার কোনো কিছুই মানা হয়নি।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৯ কোটি ২২ লাখ সিমকার্ডধারীর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন ১২ কোটির বেশি গ্রাহক। বর্তমানে দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইন্টারনেট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে পড়াশোনা, কেনাকাটা, দাপ্তরিক কাজকর্মÑসব ক্ষেত্রেই বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহার। অথচ স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এখনও টেলিকম সেবার বাইরে রয়েছে দেশের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী। আমাদের প্রতিবেশী দেশের তুলনায় কয়েকগুণ পিছিয়ে রয়েছে গ্রাহক পর্যায়ে ডেটা ব্যবহারেও। তবে এ খাতে গ্রাহক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব বৃদ্ধির বিশাল সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ যখন বিশ্বদরবারে ডিজিটাল সেবা প্রদানে প্রশংসিত হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে নতুন করে গ্রাহকদের ওপর আরও করের বোঝা বৃদ্ধি করা হলো। ফলে ১০০ টাকার মোবাইল সেবা ব্যবহারে গ্রাহকদের সর্বমোট কর দিতে হবে ৩৯ টাকা; যা হবে সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ।
বর্তমানে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল মিলিয়ে একজন মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক মাসে গড়ে সাড়ে ৬ জিবি ডেটা ব্যবহার করেন। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মাসে গ্রাহক ব্যবহার করেন ২৭-২৯ জিবি। বাংলাদেশের গ্রাহকরা ভারতের তুলনায় ডেটা ব্যবহারে কয়েকগুণ পিছিয়ে আছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গ্রাহক পর্যায়ের মোবাইল ইন্টারনেট সেবার কর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মালেশিয়ায় ৬%, থাইল্যান্ড ৭%, নাইজেরিয়া ৭.৫%, সিঙ্গাপুর ৯%, ইন্দোনেশিয়া ১১%, ফিলিপাইন ১২%, কম্বোডিয়া ১৩%, ভারত ১৮%, শ্রীলঙ্কা ২৩.৫%, নেপাল ২৬.২%, বাংলাদেশ ৩৩.২৫% এবং পাকিস্তানে ৩৪.৫% কর আরোপিত রয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এখনও টেলিকম সেবার বাইরে রয়েছে দেশের ৪২ শতাংশ জনগোষ্ঠী। বর্তমান মোবাইল সেবা ব্যবহারকারীদের ৬৩% মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং ৫৪% ৪জি গ্রাহক। অর্থাৎ বর্তমান মোবাইল সেবা ব্যবহারকারীদের মধ্যেও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখনও মোবাইল ইন্টারনেট সেবা (৩৭%) ব্যবহার করতে পারছে না এবং ৪জি সেবা (৪৬%) ব্যবহারের সক্ষমতাও অর্জন করতে পারেনি। এ খাতে গ্রাহক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব বৃদ্ধির বিশাল সুযোগ রয়েছে। সম্পূরক শুল্ক পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব মিলবে। তবে করের পরিবর্তে ডেটা ব্যবহার বাড়িয়ে এই রাজস্ব আদায় সম্ভব। করনীতি স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের বিপরীত দিকেই হাঁটছে। কাজেই মোবাইল সেবার চলমান উন্নয়ন এবং গ্রাহক পর্যায়ে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রসার বেগবান করতে যৌক্তিক কর কাঠামোর কোনো বিকল্প নেই।