Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 8:36 pm

মোবাইল ফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার

তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মানবজাতি প্রতিনিয়ত নিজেদের সমৃদ্ধ করছে। এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবিকাশে মানুষের জীবনযাপন অনেক সহজ এবং আরামদায়ক হয়েছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পুরো পৃথিবীটা চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। এই যে ধরুন আপনার হাতের যে মোবাইল ফোনটা, সেটা বলতে গেলে পুরো পৃথিবীর চেয়েও বড় ও বিস্তৃত। এ মোবাইল ফোনকে একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা আবিষ্কারগুলোর একটা ধরা হয়। আমি যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে চাইলে পুরো পৃথিবীটা ভ্রমণ করতে পারি আমার হাতের এই একটা মোবাইল ফোন দিয়েই। তাই এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে উন্নয়নের স্বর্ণ শিখরেই আমরা অবস্থান করছি এখন। তবে আমাদের এটাও মানতে হবে যে, মুদ ার উল্টা পিঠও রয়েছে। সারা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়ে জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে যে মোবাইল ফোন তারও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে।

তবে চারপাশে মানুষের মোবাইল ফোনের ব্যবহারের দিকটি খেয়াল করলে বোঝা যায় যে আমরা এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন নই। প্রয়োজনে অপ য়োজনে মোবাইল চাপাচাপির এ যেন এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে চারদিকে। চলতে ফিরতে, উঠতে বসতে, ঘরে-বাইরে যেখানেই চোখ বোলানো হোক না কেন সবাই যেন এ মোবাইল ফোন নিয়ে এক মহা ব্যস্ততায় মেতে রয়েছে। হয়তো কেউ কেউ প্রয়োজনেই এ মোবাইল ফোন চালাচ্ছে। তবে অধিকাংশ মানুষই অপ্রয়োজনেই সারাক্ষণ মোবাইল চাপাচাপি করছি। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, টুইটার আরও কত সব মোবাইল অ্যাপে যে মানুষ তাদের মূল্যবান সময়গুলো অপচয় করছে এবং সে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে সে বিষয়ে তার কোনো খেয়ালই নেই।

অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষতিই হয়ে থাকে। সাধারণত ২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মোবাইল ফোনসহ যেকোনো ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ জ্বালা করা শুরু করে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা মনে হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে চোখ খোলা রাখতেও ক্লান্তিবোধ হয়। তাছাড়া মোবাইল ফোন চালানোর সময় ঘাড় বাঁকা করে মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। এর ফলে ঘাড় ব্যথার সমস্যা হতে পারে যাকে টেক্সট নেকও বলা হয়। অনেক সময় হেডফোন লাগিয়ে উচ্চ শব্দে গান শুনা হয় এতে কানের সমস্যা হতে পারে।

এছাড়া অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে একজন মানুষের  ঘুমের ব্যাঘাত, দুশ্চিন্তা, হতাশা থেকে শুরু করে তার আরও অসংখ্য নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন হতে পারে। যেমন নমোফোবিয়া নামক এক ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে। এটি এরকম ফোবিয়া বা ভয় যা মোবাইল ফোনের কারণে সৃষ্ট। মোবাইল ফোন বেশ দামি এবং সার্বক্ষণিক সঙ্গী হওয়ায় ব্যবহারকারীরা তা নিয়ে সর্বদা বেশ সতর্ক থাকেন। তা সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে রূপ নেয় ফোবিয়ায়ত। তাদের মধ্যে মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেলার কিংবা  ঠিক জায়গায় আছে কিনা সর্বদা তটস্থ থাকার এই ফোবিয়া বা ভয় এর রোগকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় নমোফোবিয়া বলা হয়। মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে এরকম আরও অসংখ্য মানসিক সমস্যায় ভুগতে হয় একজন মানুষকে।

আরেকটি ভাবনার বিষয় হলো কিশোর ও তরুণ সমাজকে নিয়ে। তারা যে হারে মোবাইল ফোন চালায় সেটা সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল ফোন আমাদের ব্রেনওয়েভে পরিবর্তন আনতে পারে। তরুণ প্রজšে§র স্মৃতিশক্তির ওপর এর  বিরূপ প্রভাব রয়েছে। সুইস গবেষকরা ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি ৭০০ কিশোর-তরুণের ওপর বছরখানেক ধরে একটা গবেষণা করেছে। এতে দেখা গেছে, মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন তাদের মস্তিষ্কের বিকাশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। একটা দেশের কিংবা জাতির সম্পদই হলো তরুণ সমাজ। আর তারাই যদি এরকম একটা ইলেকট্রিক ডিভাইসে আসক্ত হয়ে নিজেদের এবং দেশ ও জাতির সুন্দর একটি ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দেয় তাহলে সে জাতির ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি থাকে না।

এত নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের পরও এটা অস্বীকার করা যায় না যে মোবাইল ফোনের ভালো দিক নেই। অবশ্যই এর ইতিবাচক ব্যবহারের অনেক উপকারী দিক রয়েছে। আমাদের সব সময় এর পরিমিত ও প্রয়োজনীয় ব্যবহারের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, মোবাইল ফোন যেন আমাদের নয়, আমরাই যেন আমাদের কল্যাণে একে ব্যবহার করতে পারি। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে আমার নিজের কল্যাণে, জাতির কল্যাণে সর্বোপরি পুরো পৃথিবীর কল্যাণে।

রিপন আল মামুন

শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়