রোহান রাজিব: মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন দিন দিন বেড়েই চলছে। এক বছরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন ২১ দশমিক ২২ শতাংশ এবং ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় ১৬১ দশমিক ৪৫ শতাংশ লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ব্যাংক কার্ডের বিদেশি মুদ্রায় ৬০৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি মুদ্রায় কার্ড লেনদেন বৃদ্ধি ৩৭৩ কোটি ৬০ লাখ বা ১৬১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এসময় দেশি মুদ্রায় লেনদেন হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ হাজার ২৬০ কোটি ৪০ লাখ টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, বাজারের নগদ ডলার না থাকার কারণে এখন মানুষ কার্ডে ডলার লেনদেনে ঝুকছে। এছাড়া কার্ডের চেয়ে নগদ ডলারের দাম বেশি। এজন্য গ্রাহকরা এখন কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন করে। তাই কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর দেশি ও বিদেশি মুদ্রায় কার্ডে মোট ৩৮ হাজার ১৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবরে লেনদেনর পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৫০১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা মোট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৪৪ লাখ ২২ হাজার ৭৯৮টি। এর মধ্যে ডেবিট কার্ড দুই কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৫৮টি। ক্রেডিট কার্ড ২০ লাখ ৬৮ হাজার ৫৯৭টি এবং প্রিপেইড কার্ড রয়েছে ৩১ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪৩টি। সংখ্যার মতো কার্ড লেনদেনের সিংহভাগই হয় ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে।
গত অক্টোবর মাসে ডেবিট কার্ডে ৩৫ হাজার ২৫৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দুই হাজার ৪৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ও প্রি-পেইড কার্ডে লেনদেন হয় ৩০৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংকগুলো এখন গ্রাহকদের বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডে লেনদেন করতে উৎসাহিত করছে। এর ফলে মানুষ এখন ভ্রমণের ক্ষেত্রে কার্ডে লেনদেন করছে। তাই বিদেশি মুদ্রায় আগের তুলনায় এখন লেনদেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও চায়Ñগ্রাহক নগদ লেনদেন থেকে সরে আসুক। এরকম ডিজিটাল লেনদেন করুক।
অন্যদিকে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৯৩ হাজার ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭৬ হাজার ৭২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি ১০ লাখ টাকা বা ২১ দশমিক ২২ শতাংশ।
বিকাশ, রকেট, নগদ, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে
আর্থিক সেবা দিচ্ছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩টি এমএফএস সেবার হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের অক্টোবর শেষে এ খাতে নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে ১৮ কোটি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৩ জন দাঁড়ায়। এর মধ্যে পুরুষ ১০ কোটি ৮৬ লাখ ২১ হাজার ৮২৪ এবং মহিলা গ্রাহক সাত কোটি ৮৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৬ জন। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ২১ হাজার ৮০৩টি।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ এবং মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে। রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর অক্টোর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন অর্থাৎ টাকা পাঠানো হয়েছে ২৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। আর উত্তোলন করা হয়েছে ক্যাশ আউট ২৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। এমএফএস সেবায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২৫ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় দুই হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার তিন হাজার ৩৫৯ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটায় দুই হাজার ২৮৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
লেনদেন উৎসাহিত করতে সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা দিনে এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা জমা করতে পারেন।
