Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 6:53 am

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন ৯৪ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দিন দিন লেনদেনের অঙ্ক বেড়ে চলছে। চলতি বছরের জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকরা ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা লেনদেন করেছে, যা একক মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে একক মাস হিসেবে রেকর্ড লেনদেন হয় এপ্রিল মাসে এক লাখ সাত হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধা নিয়ে থাকেন দেশের সব শ্রমজীবী মানুষ। তাছাড়া ব্যাংকের ঝামেলা এড়াতে অনেকেই এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন শুধু টাকা পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে এর মাধ্যমে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বেতনও বিকাশ, রকেট কিংবা নগদের মতো বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। তাই দিন দিন বেড়ে চলছে এর প্রসার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন মাসে লেনদেন হয়েছে ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বেশি বা ২০ শতাংশ। গত বছর (২০২১) জুনে লেনদেন হয়েছে ৭৮ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। আর মে মাসের তুলনায় ১৭ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা বেশি বা ২৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। টাকা জমা, টাকা উত্তোলন, স্থানান্তর, পরিশোধ, বিল পরিশোধ সবকিছু মিলেই হিসাব হয় লেনদেনের।

এমএফএসের লেনদেন বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম শেয়ার বিজকে বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিনই নতুন নতুন সেবা নিয়ে আসছে। বিকাশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন সেবা দেয়ার কারণে নতুন গ্রাহক যুক্ত হচ্ছে, যার জন্য এ প্ল্যার্টফম আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। এজন্য  দিন দিন লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে।

তিনি বলেন, কভিড পরিস্থিতির উন্নতির প্রেক্ষাপটে সার্বিক আর্থিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার মোবাইল আর্থিক সেবা খাতেও লেনদেন বেড়েছে। তাছাড়া সেই সময় এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেনের যে নির্ভরতা তৈরি হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকায় মোবাইল আর্থিক সেবার পরিধি বাড়ছে, বাড়ছে গ্রাহকসংখ্যাও। এছাড়া সরকার এ খাতকে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারও সামাজিক নিরাপত্তা খাতসহ বিভিন্ন ধরনের ভাতা বিতরণে ব্যবহার করছে মোবাইল আর্থিক সেবায়, যার ফলে এ সবকিছুর প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে মোবাইল আর্থিক সেবা খাতের লেনদেনের প্রবৃদ্ধিতে।

বিকাশ, রকেট, নগদ, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের

মাধ্যমে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩টি এমএফএস সেবার হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুন শেষে এ খাতে নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৮৬ লাখ ৩৯ হাজার ৬৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ কোটি ৩৫ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫৭ এবং মহিলা গ্রাহক সাত কোটি ৪৬ লাখ ৯৬ হাজার ৩৩৪ জন। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১৫ হাজার ৬৬৫।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ এবং মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে। রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর জুনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন অর্থাৎ টাকা পাঠানো হয়েছে ২৭ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। আর উত্তোলন করা হয়েছে (ক্যাশ আউট) ২৬ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। এমএফএস সেবায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২৪ হাজার ৫২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় তিন হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার দুই হাজার ৫৯ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটার তিন হাজার ১২৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়।

লেনদেন উৎসাহিত করতে সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা দিনে এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ টাকা জমা করতে পারেন।

বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের মার্চে। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। তবে বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে।