মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অর্ধেক হিসাব নিষ্ক্রিয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছে ছয় কোটি ৭৩ লাখ ৬৬ হাজার। এর মধ্যে সক্রিয় হিসাব সংখ্যা তিন কোটি ৩৪ লাখ ৩০ হাজার। সেই হিসাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ৫০ দশমিক ৩৭ শতাংশ হিসাবই নিষ্ক্রিয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস)-সংক্রান্ত হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা ধারাবাহিক বাড়লেও সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা সেই হারে বাড়েনি।

জানা গেছে, টানা তিন মাস একবারও লেনদেন হয়নি-এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে থাকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে ২০টি ব্যাংক চালু করলেও বর্তমানে ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ফেব্রুয়ারি শেষে এসব প্রতিষ্ঠানে মোট নিবন্ধিত এমএফএস হিসাবের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় কোটি ৭৩ লাখ ৬৬ হাজার। এ সেবায় গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার লেনদেন হয়। টাকার অঙ্কে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ১২৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। আর আলোচ্য সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৯ হাজার ২২ জন।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন পছন্দের মাধ্যম।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, আলোচিত মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোয় টাকা জমা পড়েছে ১২ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। উত্তোলন করা হয়েছে ১১ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে পাঁচ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে ৭৩৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ২৬১ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪২৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সরকারি পরিশোধ ১১১ কোটি ২২ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা।

এদিকে গত জানুয়ারি মাসে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করে দেয়। যথাযথভাবে চালু না থাকায় ব্যাংক দুটিকে এই সেবা বন্ধের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে বর্তমানে দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে ১৬টিতে নেমে এসেছে। এর আগেও ইস্টার্ন ব্যাংকসহ দুটি ব্যাংক তাদের এমএফএস সেবা বন্ধ করে দেয়।

জানতে চাইলে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া শেয়ার বিজকে বলেন, কয়েক মাস ধরেই এমএফএস সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতির কারণেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে জানুয়ারি শেষে এমএফএস হিসাবের সংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার, যা আগের মাসের তুলনায় দশমিক তিন শতাংশ কম। ডিসেম্বর হিসাবে এই সংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার। সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা জানুয়ারিতে কমে। জানুয়ারি শেষে এমএফএস এ সক্রিয় হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার, যা আগের মাসের তুলনায় ১০ দশমিক তিন শতাংশ কম। ডিসেম্বর হিসাবের সংখ্যা ছিল তিন কোটি ৭৩ লাখ ১৩ হাজার।

জানুয়ারি শেষে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৯৮ হাজার ৯৯৬। ডিসেম্বরে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৩।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, এমএফএস-সংক্রান্ত নীতিমালায় এই সেবা প্রদানের জন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান করার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি ব্যাংক গত জানুয়ারি থেকে তাদের এমএফএসের কার্যক্রম বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে। তবে তাদের গ্রাহক সংখ্যা খুব সামান্য ছিল; ফলে কোনো প্রভাব পড়বে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৪ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড় লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১১৬ কোটি টাকা। মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোয় টাকা জমা পড়েছে ১২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। উত্তোলন করা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।

গত জানুয়ারিতে এমএফএসের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে ৭৪৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ২৭৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪০৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সরকারি পরিশোধ ২৮৮ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৫২৭ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০