মোমিনের কৃষি বিপ্লব

আধুনিক চাষাবাদে বিপ্লব ঘটিয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের কৃষক মো. আবদুল মোমিন। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষাবাদ করে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। এখন শুধু নিজের জন্যই নয়, এলাকার প্রান্তিক কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনেও নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন মমিন।
কৃষকের জন্য চিথলিয়া গ্রামে সিআইজি (ফসল) নামে একটি সমবায় সমিতি গড়ে তুলেছেন তিনি। এছাড়া প্রযুক্তির মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে এলাকায় গড়ে তুলেছেন ‘যন্ত্রসেবা প্রদান কেন্দ্র’ নামে একটি কৃষি শিক্ষা পাঠাগার। চাষাবাদে পানির অভাব পূরণ করতে বসিয়েছেন সোলার পাম্প। শুধু ফসল উৎপাদন নয়, এলাকার প্রায় ৫০০ পরিবারের মাঝে ২৫০০ পামগাছের চারা বিতরণ ও রোপণ করেছেন। প্রায় এক হাজার তাল ও খেজুর গাছের চারা রোপণ করে এলাকার বনায়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ও ২৫ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন।
কৃষক মো. আবদুল মোমিন বলেন, স্থানীয় একটি মাদরাসায় দীর্ঘদিন বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেছি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ না হাওয়ায় শেষ পর্যন্ত কৃষিকাজ শুরু করি। এ এলাকায় মাঠে মাঠে যখন তামাকের আবাদ হতো, তখন আধুনিক পদ্ধতিতে বেগুন, মরিচ, লাউ, আলু, পেঁপে, টমেটো, গাজর, তরমুজ, স্ট্রবেরিসহ নানা ধরনের ফল চাষাবাদ করে সফল হই। এভাবে সবজি চাষ দেখে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ তার পাশে দাঁড়ায়। প্রশিক্ষণ দেয় কৃষিকাজে অধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কৌশল, সার, সেচ ও কীটনাশকের ব্যবহারের ওপর। এরপর মোমিনকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার মাধ্যমে এ এলাকায় ধান গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত নতুন ও উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী ব্লক তৈরি করে অন্য কৃষককে উদ্বুদ্ধ করেন।
জানা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বিভাগীয় পর্যায়ে ২০০ চাষি কৃষিকাজে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সেখানে কৃষক মোমিন দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে উপজেলার একজন আদর্শ চাষি হিসেবে পরিচিতি পান। ২০১০ সালে চার বিঘা জমিতে বাউকুল ও আপেলকুল চাষ করে সফল হন। ২০১২ সালে তিন বিঘা জমিেেত তরমুজ চাষ করে লাভবান হন। মোমিন এলাকার কৃষকদের নিয়ে কৃষিশিক্ষা সফর করে তাদের আম, লিচু, কলা ও পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। এলাকায় চাষাবাদে পানির অভাব পূরণ করতে চিথলিয়া সিআইজি (ফসল) সমবায় সমিতির উদ্যোগে ১২টি সোলার পাম্প স্থাপন করেন। সেখানে প্রায় ১২০০ বিঘা জমিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সেচ দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, সোলার পাম্পে সেচ সুবিধা পাওয়ায় ফসল উৎপাদনের খরচ অনেকটা সাশ্রয় হয়েছে। সেচ সুবিধা পর্যাপ্ত থাকায় তিনের অধিক ফসল জš§ানো সম্ভব হচ্ছে। স্থানীয় চিথলিয়া ইউপি চেয়ারম্যন গিয়াস উদ্দিন জানান, চিথলিয়া সিআইজি সমবায় সমিতির সংগঠক আবদুল মোমিনের নিবিড় ও একনিষ্ঠভাবে কাজ করায় এ ইউনিয়নের মধ্যে গ্রামের রূপরেখা পরিবর্তন হয়েছে। কৃষিতে উন্নয়ন দেখে সিআইজি সমবায় সমিতিকে সরকার প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টাকার আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি
বিনামূল্যে দিয়েছে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, কৃষিতে আবদুল মোমিনের বিভিন্ন অবদান রয়েছে। সম্প্রতি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অর্থ ও পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি আরও জানান, তার কৃষি পাঠাগারে সরকারিভাবে শিক্ষা উপকরণ ও আসবাবপত্র দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

কুদরতে খোদা সবুজ

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০