Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:17 pm

মোহামেডানসহ চার ক্লাবে পুলিশের অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক: এবার একসঙ্গে চার ক্লাবে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত আরামবাগ, মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া ও দিলকুশা ক্লাবে এ অভিযান চালানো হয়। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। ক্লাবগুলো থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা, মদ, সিসা ও ক্যাসিনো (জুয়ার) সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।
ওই ক্লাবগুলোয় ক্যাসিনো রয়েছে বলে প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে অংশ নেওয়া একজন পুলিশ সদস্য জানান, চারটি ক্লাবেই ক্যাসিনোর সামগ্রী পাওয়া গেছে।
চার ক্লাবের মধ্যে আরামবাগ ও দিশকুশা ক্লাবের সভাপতি ডিএসসিসির ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ. কে. এম. মমিনুল হক সাঈদ। আর ভিক্টোরিয়ার সভাপতি যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।
অভিযান প্রসঙ্গে ডিসি আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্যাসিনো বন্ধের জন্যই আমাদের এ অভিযান। চারটি ক্লাবে অভিযান হচ্ছে। সেখান থেকে ক্যাসিনোর সামগ্রী, টাকা ও মদ উদ্ধার করা হয়েছে।’
আগে অভিযান কেন চালানো হয়নি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান সব সময় চলছে। তিনি আরও বলেন, ক্যাসিনোর সামগ্রী একদিনে আসেনি। তার মানে পুলিশ জানত না বা পুলিশ কিছু করেনি তা নয়। তথ্য পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সব সময় অভিযান পরিচালনা করেছে। হয়তো এত বড় পরিসরে হয়নি। মানুষ যেভাবে প্রত্যাশা করেছে, সেভাবে হয়নি।
চার ক্লাব ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ক্লাবেই ক্যাসিনোর বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম রয়েছে। জুয়া খেলার বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামও রয়েছে।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এডিসি শিবলী নোমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একসঙ্গে চার ক্লাবে অভিযান চালানো হচ্ছে। তার নেতৃত্বে আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবে অভিযান চলছে। তিনি বলেন, বিকাল সাড়ে ৩টায় আরামবাগ ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, আগে থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা। অন্ধকারে সবকিছু দেখা যাচ্ছিল না। তবে সেখানে ক্যাসিনো চলে সেটা বোঝা যাচ্ছিল। অভিযানের খবর শুনে সবাই পালিয়ে যায়। দিলকুশায়ও কাউকে পাওয়া যায়নি। এসব জুয়া-ক্যাসিনোতে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চার ক্লাবের মধ্যে ভিক্টোরিয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলার ৯টি বোর্ড, এক লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ তাস, জুয়ায় ব্যবহৃত চিপস ও মদ পাওয়া গেছে। মোহামেডানে পাওয়া গেছে দুটো রুলেট টেবিল, ৯টি বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ড, ১১টি ওয়্যারলেস সেট ও ১০টি বিভিন্ন ধরনের চাকু। আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবেও বাকারা এবং রুলেট টেবিলসহ বিভিন্ন জুয়ার সরঞ্জাম পেয়েছে পুলিশ। তবে সবগুলো ক্লাবই বন্ধ ছিল বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকায় যুবলীগ নেতাদের ‘৬০টি ক্যাসিনো চালানোর’ খবর আসে সংবাদমাধ্যমে।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই গত বুধবার বিকালে গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বাসা এবং ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে একযোগে অভিযান চালায় র‌্যাব। শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ ফকিরাপুলের ওই ক্লাবের সভাপতি।
কয়েক ঘণ্টার অভিযানে ওই ক্লাবে ক্যাসিনো বসিয়ে জুয়ার আড্ডা চালানোর বিপুল আয়োজনের দৃশ্য পাওয়া যায়। সেখান থেকে ২৪ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়। আর গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেফতারের পর তার বাসায় ৫৮৫ পিস ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ও অবৈধ অস্ত্র পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব।
ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের পাশাপাশি ওই এলাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ও বনানীর আহমেদ টাওয়ারে গড়ে তোলা একটি ক্যাসিনোতেও র‌্যাবের অভিযান চলে।
দেশের বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধভাবে জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে। তবে বাংলাদেশেও যে সøট মেশিন, রুলেট টেবিলের মতো সরঞ্জাম নিয়ে পুরোদত্তর ক্যাসিনো চলে সে খবর সাধারণ মানুষের কাছে নতুন।
এর দুদিনের মাথায় শুক্রবার ঢাকার কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ও ধানমন্ডি ক্লাবেও অভিযান চালায় র‌্যাব। কলাবাগান ক্রীড়াচক্র থেকে ক্লাব সভাপতি কৃষক লীগ নেতা সফিকুল আলম ফিরোজসহ পাঁচজনকে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। ধানমন্ডি ক্লাবের বারে কী পরিমাণ মদের মজুত আছে সে হিসাব জমা দিতে বলা হয়। এছাড়া শনিবার চট্টগ্রামের পাঁচটি ক্লাবে একযোগে অভিযান শেষে তিনটিতে জুয়ার আসর চালানোর প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব।