Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:02 am

মৌচাকবাড়ি

বাড়িটি যেন মৌমাছিদেরও একটি-দুটি নয়, অন্তত ৫০টির বেশি মৌমাছির চাক বাসা বেঁধেছে বাড়িটিতে। দোতলা ভবনটির কার্নিশ, বারান্দা কিংবা দরজার ওপরের অংশ সব জায়গায় বাসা বেঁধেছে মৌমাছি। এমনকি ভবনের আশেপাশে থাকা গাছগুলোর ডালেও বাসা বেঁধেছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ খাকছাড়া এলাকায় এমনই একটি মৌমাছির বাড়ি রয়েছে। প্রায় ১০ বছর ধরে মৌমাছিরা এখানে বাসা বেঁধে থাকছে। তাই স্থানীয়রা বাড়িটিকে এখন ‘মৌচাকবাড়ি’ নামেই চেনে। বাড়িটির চারপাশে মৌমাছির আনাগোনা ও দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসেন।
৭০ বছর বয়সি কবির মল্লিকের দোতলা ভবন এ মৌচাকবাড়ি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ ভবনের চারদিক, বারান্দার দেওয়াল, দরজার ওপরের অংশ কোনো জায়গা ফাঁকা নেই, সবখানে ঝুলছে মৌচাক। ভবনের পাশে গাছের ডালেও ঝুলছে মৌমাছির বাসা। দূর থেকে বাড়িটি দেখলে মনে হয় যেন মৌমাছির বাড়ি। এভাবে প্রায় অর্ধশত মৌচাক বাসা বেঁধে থাকে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত।
গৃহকর্তা কবির মল্লিকের তিন ছেলের দুজন ইতালি প্রবাসী। আরেক ছেলে সরকারি চাকরিজীবী। এ বাড়িতে সহধর্মিণী ও মৌমাছিরাই এখন তার সব। বাড়িজুড়ে মৌমাছির বাসা বাঁধার রহস্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় এক যুগ আগে বাড়িটি নির্মাণ করেছি। এরপর মৌচাক বসে আমার বাড়ির দেওয়ালঘেঁষে। আমি মৌমাছি পছন্দ করি। এরা আমাদের বাড়ির কাউকে কোনো ক্ষতি করে না। আজ পর্যন্ত কাউকে কামড়ায়নি। তিনি আরও বলেন, অনেক মৌয়াল মধু কিনতে বাড়িতে আসে। তবে আমি মধু বিক্রি করি না। স্থানীয়রাও মৌচাকগুলো দেখাশোনা করে। কেউ মৌমাছির চাকে ইট ছোড়ে না। নিজেদের মধু প্রয়োজন হলে বছরে দু-একটা চাক থেকে মধু সংগ্রহ করি। প্রতিবেশী,
আত্মীয়-স্বজনকে মধু দিই।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ বাড়িতে সব সময় মৌচাক থাকে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা দেখতে আসে। মাঝেমধ্যে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। তখন আমরা খাঁটি মধু পাই। এলাকাবাসীর কাছে বাড়িটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
দশনার্থীরা বলেন, নাম শুনে মৌচাকবাড়িটি দেখতে এসেছি। বাড়িটি ঘিরে রাখা মৌচাক দেখতে বেশ। চারদিক থেকে মধুর ম-ম গন্ধ ভেসে আসে। মনে হয়, মৌমাছির রাজ্যে এসেছি আমরা।
মাদারীপুরের পরিবেশবিদ ও সাহিত্যিক অজয় কুণ্ডু বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এ মৌমাছিদের নির্বিঘ্নে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন কবির মল্লিক। তার মতো অন্যদেরও এর যত্নে সচেষ্ট হওয়া উচিত। বর্তমানে যত্রতত্র গড়ে ওঠা ইটভাটার কারণে মৌমাছি আর মৌচাক কমে যাচ্ছে। তাই অনুমোদনবিহীন ইটভাটা বন্ধের দাবি জানাই। ২০ থেকে ২৫ বছর আগে অনেক বাড়িতে মৌমাছির বাসা দেখা যেত। পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে এখন আর তেমন মৌচাক বাড়ি চোখে পড়ে না। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারলে মৌচাকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে ব্যতিক্রমী মল্লিকবাড়ির মৌচাকবাড়ির দৃশ্যটি সবার নজর কেড়েছে।

মেহেদী হাসান শুভ, মাদারীপুর