অনেকে বলে বাজারে ভালো কোম্পানি নেই, কথাটা ঠিক নয়। এখনও অনেক ভালো কোম্পানি রয়েছে যেখানে বিনিয়োগ কম হয়। এটাও সত্য ভালো পণ্য না থাকলে ভালো বিনিয়োগকারী আসবেন না। গ্রামীণফোনের মতো আরও ১০টি ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে পারলে একদিকে বাজার সম্প্রসারিত হবে এবং নতুন নতুন বিদেশি, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারী আসবেন। এখন বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীর খুবই অভাব। বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী একেবারেই কম। ভালো কোম্পানি না থাকায় ভালো বিনিয়োগকারীও আসছেন না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক মঈন উদ্দিন এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. সাহাদাৎ হোসেন, এফসিএ।
মঈন উদ্দিন বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আন্তরিকতা রয়েছে। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা, আইপিও সংক্রান্ত বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। ডিএসই ও সিএসই একের পর এক বিনিয়োগ সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তারপরেও বাজারের মন্দা কাটছে না। তারল্য সংকটে বাজারের টার্নওভার ৩০০ থেকে ৪০০ কোটিতে রয়ে গেছে। বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যখন বাজারে ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন সেই উদ্যোগের প্রভাব পড়তে একটু সময় লাগে। এটা সত্য। কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে তার প্রতিফলন ঘটবে এটি আশা করা ঠিক নয়। যখন বাজার মন্দাবস্থায় থাকে তখন যেসব কোম্পানির পরিচালন ব্যবস্থা দুর্বল। শেয়ার সংখ্যা ও পরিশোধিত মূলধন কম, অতীত ইতিহাস তেমন ভালো নয় এবং নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার পরিমাণ খুবই কম এসব কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায়। এটি বিশ্বের সব পুঁজিবাজারে দেখা যায়, শুধু এদেশে নয়। তখন এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী এ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। বিনিয়োগকারীরা না বুঝে তাদের ফাঁদে পা দেয়। ফলে এক সময় দেখা যায়, যা বিনিয়োগ করেছেন সবই নাই হয়ে গেছে। এ রকম উদাহরণ বহু আছে। গত পাঁচ বছরে বাজারে যেসব কোম্পানি এসেছে, তাদের মধ্যে অনেক কোম্পানির শেয়ারদর এখন অভিহিত মূল্যের নিচে এবং কোনো কোনো কোম্পানি নামে-বেনামে শেয়ার বিক্রি করেছে। কী পরিমাণ প্লেসমেন্ট শেয়ার বাণিজ্য হয়েছে, সেটি একমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানে। অনেক কোম্পানি গত ১০ বছরে এক বা দুইবার লভ্যাংশ দিয়েছে। যার পরিমাণ পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ। আর বাকি আট বছরে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। কিন্তু প্রথম বাজারে আসার সময় ওই কোম্পানির স্পন্সর শেয়ার ধারণক্ষমতা ছিল ৪০ শতাংশ। এখন ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ নেমে এসেছে। আবার অনেক সময় স্পন্সরদের অংশ ১০ শতাংশের নিচে। আসলে এ বিষয়গুলো বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ৃঅনেকে বলে বাজারে ভালো কোম্পানি নেই। কথাটা ঠিক নয়। এখনও অনেক ভালো কোম্পানি রয়েছে, যেখানে অনেকে বিনিয়োগ করেন না। তবে এটাও সত্য ভালো পণ্য না থাকলে ভালো বিনিয়োগকারী আসবেন না। আমরা যদি গ্রামীণফোনের মতো আরও ১০টি ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে পারি, তাহলে একদিকে বাজার সম্প্রসারিত হবে এবং নতুন নতুন বিদেশি, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারী আসবেন বলে মনে করি। সত্যিকার অর্থে এখন বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীর খুবই অভাব। বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী একেবারেই কম। গত কয়েক বছরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। অন্যদিকে বাজারে তারল্য সংকট চলছে। এসব কারণে তারা বিনিয়োগে আগ্রহ পাচ্ছে না।
মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, বাজারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও শেয়ারদর পড়ে যাচ্ছে। আবার সেই সঙ্গে মৌলভিত্তি শেয়ারের দরও কমে যাচ্ছে। আসলে এখানে কিছু কারণ রয়েছে। শেয়ারদর বাড়া বা কমা শেয়ারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। যেসব কোম্পানি ভালো নয়, উৎপাদন নেই, শেয়ার সংখ্যা কম ওইসব শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা সহজ হয়। ফলে ওই শেয়ারের দর বৃদ্ধি পায়। যখন ভালো শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হয়, তখন ওই শেয়ারে বিক্রির চাপ পড়ে, ফলে দর কমতে থাকে। অর্থনীতিতে একটি কথা আছে পণ্যের সরবরাহ বাড়লে চাহিদা বাড়বে। এখানে চাহিদা বলতে বিনিয়োগকারীকে বোঝানো হয়েছে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ