মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বর্তমানে কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় পুঁজিবাজার। বিনিয়োগের উপযোগী শেয়ার রয়েছে অনেকগুলো। এর মধ্যে শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিওর বিবেচনায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ব্যাংকিং খাত। অন্যদিকে পিই রেশিওর ভিত্তিতে পিছিয়ে রয়েছে পাট খাতের কোম্পানিগুলো। অর্থাৎ বিনিয়োগের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পাট খাত। ডিএসই থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় পিই রেশিও ১৬ দশমিক ৩০ পয়েন্ট। আর খাতভিত্তিক পিইর হিসাবে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। বর্তমানে এ খাতের পিই অবস্থান করছে ৯ দশমিক এক পয়েন্টে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত।
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, ব্যাংকিং খাতে পিই কম থাকার কারণ হচ্ছে এ খাতের শেয়ারের দর অস্বাভাবিকহারে কমে যাওয়া। মূলত এটা শুরু হয় ২০১০ সালে। সেই সময় তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দরপতন হয়ে তলানিতে চলে যায়। যার জের ধরে কমে যায় শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতও। তাদের মতে, ব্যাংক হচ্ছে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত। সে জন্য এ খাতে বিনিয়োগ অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে এগিয়ে থাকে। সম্প্রতি অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারদর বাড়লেও এখনও এসব শেয়ার অতিমূল্যায়িত নয় বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা-নূর-ই নাহারীন বলেন, তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির পিই কম রয়েছে সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ এমনিতেই নিরাপদ। এক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাংককে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কারণ এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিমুক্ত। তাছাড়া এ খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান শেয়ারহোল্ডারদের ভালো রিটার্ন দেয়।
একই বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের উচিত ওইসব শেয়ারে বিনিয়োগ করা যেসব কোম্পানি থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারেন। আর এটি নির্ধারণে শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।
অন্যদিকে পাট খাতের পিই অধিক প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, এ খাতে কোম্পানি সংখ্যা মাত্র তিনটি। এর মধ্যে দুটির অবস্থা অপেক্ষাকৃত নাজুক। কোম্পানি দুটির শেয়ারও অতিমূল্যায়িত। যে কারণে এ খাতটির গড় পিই রেশিও বেশি, বর্তমানে যা ১১১।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পিই রেশিও ১৫-এর মধ্যে থাকলে সেই কোম্পানিকে বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ভাবা হয়। পিই ১৫-এর ওপরে চলে গেলে ক্রমেই বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ে যায়। তাই বিনিয়োগ ঝুঁকি এড়াতে কম পিই সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে যেসব কোম্পানির পিই ৪০-এর ওপরে চলে যায় সেসব শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন ঋণ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কারণ এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে ঝুঁকিতে পড়বেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের মধ্যে বর্তমানে সিমেন্ট খাতের ৪৩ দশমিক দুই পয়েন্টে, সিরামিক খাতের ২১ দশমিক এক পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতের ২০ দশমিক পাঁচ পয়েন্ট, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ৩০ পয়েন্ট, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ১২ দশমিক ছয় পয়েন্ট, সাধারণ বিমা খাতে ১১ দশমিক পাঁচ পয়েন্ট, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ২২ দশমিক পাঁচ পয়েন্টে।
অন্যদিকে বিবিধ সেবা ও আবাসন খাতের ২৬ দশমিক ৯ পয়েন্টে, চামড়া খাতের ১৫ দশমিক দুই পয়েন্ট, টেলিযোগাযোগ খাতে ২৪ দশমিক আট পয়েন্ট, কাগজ খাতের মাইনাস ১৪ দশমিক পাঁচ পয়েন্ট, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ২০ দশমিক আট পয়েন্ট ও বস্ত্র খাতের ১৯ দশমিক আট পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মৌলভিত্তির বিচারে এগিয়ে ব্যাংক পিছিয়ে পাট খাত
