Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 9:02 am

মৌলভিত্তির বেশকিছু কোম্পানি বিনিয়োগ উপযোগী

২০১৯ সালে বাজার থেকে সবচেয়ে কম অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। আর যেসব কোম্পানি বাজারে এসেছে, তার বেশিরভাগই স্বল্পমূলধনি। বড় বা লাভজনক কোম্পানি বাজারে আসছে না। যতই সমস্যা থাকুক না কেন, এখনও বাজারে বেশকিছু মৌলভিত্তির কোম্পানি রয়েছে। ইপিএস বিবেচনা করলে সেগুলো বিনিয়োগ উপযোগী। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারমান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এবং সিনিয়র সাংবাদিক ফজজুল বারী।

ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে কয়েকটি বিষয়ের সন্নিবেশে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক  বলে থাকেন আস্থার অভাবে কেউ বিনিয়োগ করছে নাÑকিন্তু এটা একটি সাধারণ মন্তব্য। আসলে বাজারের এ অবস্থার নির্দিষ্ট সমস্যা বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রথমত, এখানে ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ। যার কারণে বেশিরভাগ ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। একদিকে বিনিয়োগকারী ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছে না। অন্যদিকে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে এবং আমানতের প্রবৃদ্ধির হারও বেশ কমে গেছে। এছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহও কমে গেছে। ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি আন্তর্জাতিক মানের শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ধরা হয়, সেক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ৪০ হাজার কোটির বেশি। কারণ এখানে অনেক বিষয় তুলে ধরা হয় না। এর ফলে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমে যাচ্ছে। ব্যাংক খাত হচ্ছে বাজারের বড় একটি খাত। এখানে কোনো সমস্যা দেখা দিলে এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় সূচকে। আর সূচক কোন দিকে যাচ্ছে, এটি দেখে আমাদের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেন। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন সময়ে বাজারসংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটার একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সম্প্রতি তিতাস গ্যাসের হুলিং চার্জ নিয়ে সমস্যা দেখা গেছে, যার ফলে ওই কোম্পানির শেয়ারে বড় ধরনের পতন হয়েছে, এটাও একটি কারণ। আর সর্বশেষ গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির মধ্যে একটি সমস্যা চলছে। এটার কোনো সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। মূলত এসব কারণেই বাজারের এমন অবস্থা। ভালো কোনো কোম্পানি বাজারে আসছে না। ২০১৯ সালে বাজার থেকে সবচেয়ে কম অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। আর যেগুলো বাজারে এসেছে তা বেশিরভাগই স্বল্পমূলধনি।  কিন্তু বড় বা লাভজনক কোম্পানি বাজারে আসছে না। এখন বাজারের যে অবস্থা অর্থাৎ বাজারে যতই সমস্যা থাকুক না কেন, বাজারে বেশকিছু মৌলভিত্তির কোম্পানি রয়েছে। যদি সেগুলোর ইপিএস বিবেচনা করি, সেগুলো বিনিয়োগ উপযোগী। 

সাংবাদিক ফজলুল বারী বলেন, গত ৯ বছর ধরে বাজার এমনিতেই খারাপ। তারপরও আবার গত পাঁচ মাস ধরে মৌলভিত্তির শেয়ারদর কমে যাচ্ছে। কথা হচ্ছে মৌলভিত্তি শেয়ারে বিনিয়োগ করেও যদি লোকসানে পড়ে, তাহলে বিনিয়োগকারী কীভাবে আস্থা পাবেন। আশা করি নতুন বছরে বাজার ভালোর দিকে যাবে। তবে যারা বাজার পরিচালনায় রয়েছেন, তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাজারে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে এবং বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়াতে হবে। আস্থার দৃশ্যমান প্রমাণ দিতে হবে। যদি কারসাজিকারীদের নামমাত্র শাস্তি দেওয়া হয়, তাহলে বাজার ভালো হবে না। সেক্ষেত্রে বাজার এভাবেই চলতে থাকবে।  

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ