বাজারে ক্রমাগত পতন হলে কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠান বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সহযোগিতা করে। এটি সব পুঁজিবাজারেই দেখা যায়, কিন্তু আমাদের বাজারচিত্র ভিন্ন। অর্থাৎ যখন বাজারে পতন হয়, তখন কেউ সহযোগিতা করে না। আইসিবির ক্ষেত্রে সেটাই দেখা যাচ্ছে। তাদের কাছে নাকি এখন অর্থ নেই। এমনকি মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারদর অনেক নিচে রয়েছে। এ শেয়ার কেনার মতো কোনো বিনিয়োগকারী পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান এবং এবিবির সাবেক সভাপতি মো. নুরুল আমিন।
রকিবুর রহমান বলেন, কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত দরপতন হচ্ছে বাজারে। এটা দেখার কেউ নেই। যখন একটি বাজারে ক্রমাগত পতন হতে থাকে, তখন কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠান বাজারকে স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে সহযোগিতা করে থাকে। এটি সব পুঁজিবাজারেই রয়েছে। কিন্তু আমাদের বাজারে ভিন্ন চিত্র দেখা দেয়। অর্থাৎ যখন বাজার পতন হয়, তখন কেউ সহযোগিতা করে না। আইসিবির ক্ষেত্রে সেটাই দেখা যাচ্ছে। তাদের কাছে নাকি এখন অর্থ নেই। এমনকি মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারদর অনেক নিচে রয়েছে। এ শেয়ার কেনার মতো কোনো বিনিয়োগকারী পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারের বিগত বছরগুলোতে যদি লক্ষ করি, সেখানে দেখা গেছে, মানহীন কোম্পানির সমাহার ও প্লেসমেন্ট শেয়ারের রমরমা বাণিজ্য। অর্থাৎ বাজারে মানহীন কোম্পানি এনে এক ধরনের ব্যবসা করার প্রবণতা দেখা গেছে। আবার দেখা যায়, যখন কোনো শেয়ারদর বাড়ে তখন একশ্রেণির স্পন্সর সে শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেয়। এটা আসলে বাজারের জন্য দুঃখজনক। পুঁজিবাজারের মূলশক্তি হচ্ছে স্পন্সররা। তারা যদি এ ধরনের আচরণ করেন, তাহলে বাজার কীভাবে ভালো হবে?
তিনি আরও বলেন, যখন বাজারে গ্রামীণফোন অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন হাজারো বিনিয়োগকারী বাজারে এসেছে। হতাশার বিষয় হচ্ছে, কয়েক বছর ধরে কোনো বহুজাতিক কোম্পানি বাজারে আসেনি। এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো ভালো মানের কোম্পানিও আনা যায়নি।
মো. নুরুল আমিন বলেন, এখন সব ধরনের বিনিয়োগকারী বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বাজারে তিন ধরনের বিনিয়োগকারী রয়েছেÑব্যক্তিশ্রেণি, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী। সাধারণ বিনিয়োগকারী বাজারে আসছে না, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের তেমন সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকে ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছে। আবার গ্রামীণফোন নিয়ে একটি সমস্যা চলছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কিন্তু মৌলভিত্তির শেয়ার কিনে থানে। আবার একশ্রেণির বাজারবিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক খাতের অবস্থা নাজুক এবং ঋণ বেড়েই যাচ্ছে। এর একটি প্রভাব বাজারে রয়েছে। তবে হ্যাঁ, ব্যাংক খাতে কিছুটা তারল্য সংকট রয়েছে। শুধু ঋণখেলাপিকে বাজারে অর্থ সরবরাহের জন্য দায়ী করলে চলবে না। সব মিলিয়ে বাজারে সুশাসন ও আস্থার অভাব প্রকট। আবার বাজার সঠিকভাবে পরিপালন হচ্ছে কি না, সেটাও বিবেচনা করতে হবেÑবাজার দেখভাল করা যাদের দায়িত্ব, তারা সেটি সঠিকভাবে পালন করছে কি না; বিশেষ করে আইসিবি, মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। যে কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তার সঠিক ব্যবহার করছে কি না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কি সেটি দেখছে?
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ