Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 7:36 pm

মৌলভিত্তিসম্পন্ন শেয়ারে ফিরছেন বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ : ধসের পর পুঁজিবাজারে ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ধস-পরবর্তী বাজার চাঙা থাকায় তারা এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ মৌলভিত্তিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করছেন। আর বিনিয়োগকারীরা ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠায় দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা কমেছে।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, হাউজগুলোয় ‘জেড’ ও দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের চেয়ে ভালোমানের শেয়ারের ক্রেতা-বিক্রেতা বেশি। তাদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, তারা স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ভালো মানের কোম্পানি বেছে নিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় বিনিয়োগকারী রাসেল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের লভ্যাংশ ঘোষণা আসছে। সে কারণে আমার পোর্টফোলিওতে এ ধরনের শেয়ার বেশি। আর দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হলে অবশ্যই ভালো মানের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিত। জেড ও দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগে লাভের চেয়ে ঝুঁকির শঙ্কা বেশি।

অন্যদিকে গতিশীল বাজারে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাজারের এসব পরিস্থিতিতে এখান থেকে কারসাজিচক্র সুবিধা নিতে চায়। সেজন্য বিনিয়োগকারীদের সজাগ থাকা দরকার। তাই এ বাজার থেকে কেউ যাতে সুবিধা নিতে না পারে, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর রাখা দরকার।

তারা বলেন, দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বেশিরভাগ সময় ঠকেন বিনিয়োগকারীরা। টানা দর বৃদ্ধি দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানির প্রতি আকৃষ্ট হন। তাদের কেউ কেউ হয়তো মুনাফা করেন; তবে লোকসানই হয় বেশি। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোকসানেই বেশি পড়ছেন। ২০১০ সালের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, সে সময় যারা জেড ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনেছিলেন, পরে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের মাথায় রাখা দরকার। ভালো শেয়ারের সঙ্গে থাকলে ঝুঁকি যেমন কম, তেমনি মুনাফার সম্ভাবনাও বেশি।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সব সময়ই কিছু লোক সুবিধা নিতে চায়। এরা এমনভাবে বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলে যে, তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন না। যে কারণে তারা অতিমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করতে দুবার ভাবেন না। বেশিরভাগ সময়ই তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তাই এ বিষয়টি মাথায় রেখেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা বেশি ঘটে। এতে জড়িত থাকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। তারা বিভিন্নভাবে এসব শেয়ারের দর বাড়াতে চান। আর এক সময় শেয়ারগুলো চড়া দরে অন্যের কাছে বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে যান।’ তিনি বলেন, ‘দর যতই বাড়–ক না কেন, এক সময় শেয়ারটি প্রকৃত দরে ফিরে আসবে। তাই অতিমূল্যায়িত শেয়ার থেকে দূরে থাকা উচিত। এটা বেশিরভাগ সময় বিপদ ডেকে আনে।’