মৌলভিত্তি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়েনি

অর্থনীতিবিদ ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেছেন নির্বাচনের পর পুঁজিবাজারের সূচক, প্রতিদিনের গড় লেনদেন এবং বাজার মূলধন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। কিন্তু সেভাবে মৌলভিত্তি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়েনি বরং তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ এতে বোঝা যায় যে, বিনিয়োগকারীরা মৌলভিত্তি কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগ্রহ নেই।
গতকাল আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আরও উপস্থিত ছিলেন কোম্পানি আইন ও সিকিউরিটিজ বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এএম মাসুম।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন বর্তমানে দেশের বড় সমস্যা হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ। এর পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ব্যাংক কোম্পানির আইন সংশোধন, খেলাপি ঋণ কিভাবে কমানো যায় ও আদায় করা যায়, দেউলিয়া আইন সংশোধন এবং অর্থঋণ আদালতের আইনগুলো সংশোধনের বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহ ইতিবাচক।
এখন কথা হচ্ছে শুধু আইন সংশোধন করলেই হবে না এর সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। আবার ব্যাংকের যে পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছে এর বেশিরভাগই গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে। তাই যদি হয় তাহলে আইন করে কোনো লাভ নেই। অর্থাৎ আইন কতটা অর্থবহ হবে সেটিই দেখার বিষয়। দেশের সামগ্রিকভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে অনেক ভালো ভালো আইন রয়েছে। এটি যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা না হয় এবং সুশাসনের মধ্যে আনা না যায় সেক্ষেত্রে আইন করে কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।
সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশের যে জিডিপি সে তুলনায় বাজেট আরও বড় হওয়ার কথা। আমি এতে একমত? কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে, বড় বাজেট করলে সেটি বাস্তবায়নের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন সেই অর্থ নেই। অর্থাৎ অর্থ যদি না থাকে সেটি কিভাবে বাস্তবায়ন করবে। আবার দেশের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও অনেক কম। ১৬ কোটি মানুষের দেশ। সেখানে রাজস্ব আদায় মাত্র ৯ শতাংশ অর্থাৎ জনসংখ্যার তুলনায় রাজস্ব অনেক কম আদায় করা হয়। যদি ১০ শতাংশের বেশি রাজস্ব আদায় করা যায় সেক্ষেত্রে এডিপির আকার আরও বড় হবে। এখানেই দেশের মূল সমস্যা। তাই এনবিআর সংস্কার এবং কিভাবে দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি করা যায় সেদিকে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে।
অন্যদিকে অনুষ্ঠানে এএম মাসুম বলেন, ঋণের নামে বেরিয়ে যাওয়া অনেক টাকাই ব্যাংকে ফেরত আসছে না। এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও থেমে ছিল না। কিন্তু এর কার্যকর বা ফলপ্রসূ সমাধান সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি। তাই অতীতের ঋণঝুঁকি নিরসনের জন্য নতুন করে ব্যাংকে ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং সিস্টেম চালু করেছে। এটি অবশ্যই ব্যাংক খাতের জন্য ভালো হবে। এখন কথা হচ্ছে দেশের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা, আচরণ এবং সুশাসনের অনেক অভাব রয়েছে। ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ ঋণখেলাপি হয়েছে অর্থাৎ ওই টাকা উঠানোর জন্য যথেষ্ট আইন ছিল। কিন্তু সেটির সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। তাই যতই আইন করা হোক না কেন যদি নৈতিকতা ও সুশাসন না থাকে সেক্ষেত্রে তেমন ভালো হবে না বলে মনে করি।
তিনি আরও বলেন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির তুলনায় বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি সেভাবে বাড়ছে না। কয়েক বছর ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ একই জায়গা ঘুরপাক খাচ্ছে। আবার ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা পুঁজিবাজারে পড়েছে। কারণ মানি মার্কেটের সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেট ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০