Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 11:57 pm

মৌলভিত্তি রাতারাতি খারাপ  হওয়ার দায় কার?

সোমবার এনটিভিতে প্রচারিত ‘মার্কেট ওয়াচ’ নামক প্রোগ্রাম ও তার ভিত্তিতে গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘পুঁজিবাজারে আসার পর কোম্পানির মৌলভিত্তি রাতারাতি কেন খারাপ হয়?’ শীর্ষক খবরটি অনেক বিনিয়োগকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় পরিচালিত ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। সেখানে শেষোক্ত দুই বিশেষজ্ঞ যেসব কথা বলেছেন, তা বহু বিনিয়োগকারীরও মনের কথা বটে। দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসার আগে একশ্রেণির কোম্পানির ইপিএস, টার্নওভার, নেট প্রফিট, নেট অ্যাসেট ভ্যালু প্রভৃতি আকর্ষণীয় রকমের ভালো থাকে। তা থেকে স্বভাবতই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আন্দাজ করে নেন, ওই কোম্পানির মৌলভিত্তি সবল। ফলে বাজারে দাম বাড়তে থাকে সেগুলোর। তবে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর দেখা যায়, ওই শ্রেণির কোম্পানিগুলোর অবস্থাই দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। আর এভাবে প্রায় রাতারাতি, অস্বাভাবিকভাবে কোম্পানির মৌলভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার প্রাথমিক ধাক্কাটা আসে বাজারে; যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন বিনিয়োগকারীরা। এদিকে জনসংখ্যা অনুপাতে আমাদের দেশে শেয়ারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। সুতরাং এখানে গুণ ও পরিমাণগতভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে; সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নেও তা দরকার। অথচ কেবল নিয়ন্ত্রণজনিত দুর্বলতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী ও তাদের দুর্দশা দেখে বিনিয়োগে আসতে সাহস পাচ্ছেন না অন্যরা, যা দুর্ভাগ্যজনক।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে উপযুক্ত কোম্পানিকেই কেবল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ব্যাপারে বিএসইসি ও ডিএসই-কে (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আর তা সরকারের নীতি-সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন অনেকে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে বর্তমান সরকার আন্তরিক। বিএসইসি-কে শক্তিশালীকরণের মধ্য দিয়ে তার ইঙ্গিত মেলে। সাম্প্রতিক মুদ্রানীতির ঘোষণা দেখেও তা বোঝা যায়। খেয়াল করা দরকার, চলতি মুদ্রানীতি ঘোষণার পরপর পুঁজিবাজারে দরপতন লক্ষ করা গেছে। তবু সে ঘটনায় সরকার অবিচল। বরং নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে কয়েকজন আভাস দেন, বাজার থেকে ফাটকা উপাদান নির্মূলের লক্ষ্যেই ওই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এখন কথা হলো, চলতি বাজারের সবচেয়ে বড় উপাদান কোনটি, সেটি বিতর্কাধীন। তবে এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ কমই যে, মৌলভিত্তির দিক থেকে দুর্বল কোম্পানি নিজেকে সবল দেখিয়ে পুঁজিবাজারে এক ধরনের ফাটকা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। পুঁজিবাজার অত্যন্ত গতিশীল সত্তা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেখানে বেশকিছু ফাটকা উপাদান তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ করা সম্ভব হয় না হয়তো। অথচ দুর্বল মৌলভিত্তির কসমেটিক সার্জারিকৃত কোম্পানিগুলোকে সহজেই, একেবারে এন্ট্রি লেভেলে, অপসারণ করা সম্ভব তালিকাভুক্তির অনুমতি না দিয়ে। প্রক্রিয়াটি পুঁজিবাজারের সামগ্রিক মানোন্নয়নে সহায়ক হবে বলেই ধারণা। আরেকটি বিষয়, অনুমোদন প্রক্রিয়া শক্ত করে মানসম্পন্ন ও কৌশলগত গুরুত্বসম্পন্ন কোম্পানিকে প্রণোদনা দেওয়া। অনুষ্ঠানে এক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, অনেক দেশেই নাকি তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির কর হারে বিস্তর ফারাক দেখা যায়। শুরুতে কর হারে বিরাট ব্যবধান রাখার দরকার নেই, উভয় ধরনের কোম্পানির ওপর আরোপিত করে সামান্য ব্যবধানও এখানে যথেষ্ট সুফল দেবে বলে মনে করেন কেউ কেউ। উপযুক্ত কোম্পানিগুলো প্রণোদনা পেলে তা পুঁজিবাজারে বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখবে বলেই বিশ্বাস। আশা করি, নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমলে নেবেন।