শেয়ার বিজ ডেস্ক: মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিলেট গ্যাস ফিল্ড। আগেও এ এলাকায় গ্যাস পাওয়ায় এবারের জরিপেও খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র: বিডিনিউজ২৪।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন পেট্রোবাংলার সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির পক্ষে চীনের ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন মৌলভীবাজারে দুটি প্রকল্পে ৫০০ কিলোমিটার এলাকায় এ অনুসন্ধান চালাচ্ছে। জেলার কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ার একাংশ মিলিয়ে ১২০ কিলোমিটার এবং বড়লেখা ও জুড়ির ৩৮০ কিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক ভূ-কম্পন জরিপ করছে কোম্পানিটি। তবে অনুমতি না পাওয়ায় বনের ভেতরের কিছু অংশে এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি।
এদিকে অনুসন্ধান কার্যক্রমে ভূগর্ভে বিস্ফোরণের সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে ফাটল দেখা দেয়ায় ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন এলাকাবাসী। তবে ‘বৃহৎ স্বার্থে ক্ষুদ্র ত্যাগ’ মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, ‘কমলগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের অধীনে একটি চায়না কোম্পানি সার্ভের অনুমতি নিয়ে ত্রিমাত্রিক ভূ-কম্পন জরিপ করছে। এর মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলার বন বিভাগ ছাড়া বাকি অংশে কার্যক্রম শেষ হয়েছে।’
তিনি জানান, জরিপকালে কিছু মানুষ সাময়িক অসুবিধায় পড়তে পারেন। তবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাদের সহায়তা করা হবে।
চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পাবলিক রিলেশন্স অফিসার ইমাম হোসেন চৌধুরী জানান, গত জুলাই থেকে মূলত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ও কুলাউড়ায় তাদের কোম্পানি সিলেট গ্যাস ফিল্ডের হয়ে সার্ভে শুরু করেছে। জুড়ি-বড়লেখা এলাকায় শুরু হয়েছে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। কমলগঞ্জের পতনউষার, মুন্সিবাজার ও সমসেরনগর; কুলাউড়ার হাজিপুর, শরিয়তপুর ও চাতলাপুরে প্রাথমিক সার্ভে, ড্রিলিং ও বিস্ফোরণ শেষ হয়েছে। কমলগঞ্জে ৬০ ফুট ড্রিলিং করে ভূগর্ভে নিরাপদে স্যুটিং সম্পন্ন হয়েছে। তবে বন বিভাগের অনুমতি না পাওয়ায় কমলগঞ্জের রাজকান্দি বনে এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি।
এছাড়া জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় বিশাল এলাকাজুড়ে সার্ভে কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যার ব্যাপ্তি প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার। বর্তমানে হাওর এলাকায় কার্যক্রম চলছে। তবে এখনও বিস্ফোরণের পর্যায়ে যায়নি। তিনি জানান, কমলগঞ্জের সব রেকর্ড সিলেট গ্যাসফিল্ডকে জমা দেয়া হয়েছে। তবে এখানে তেল গ্যাস রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে আরও সময় লাগবে।
এ ব্যাপারে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির মৌলভীবাজার জেলার নেতা সৈয়দ অমিরুজ্জামান বলেন, ‘কমলগঞ্জের মাগুরছড়া গ্যাসকূপ জরিপের পর বলা হয়েছিলÑসেখানে অফুরন্ত গ্যাস রয়েছে। ১৯৯৭ সালে এই কূপে বিস্ফোরণের পর পাশে আরেকটি কূপ খনন করে এখনও গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই সুবাদে জেলার অন্যান্য এলাকায় প্রচুর তেল-গ্যাস পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।’ তবে জরিপ ও ড্রিলিং কার্যক্রম সঠিকভাবে করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশি কোম্পানির কার্যক্রমে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার সার্বক্ষণিক তদারকি প্রয়োজন বলে মনে করি।’
এদিকে কমলগঞ্জে ড্রিলিং ও ভূগর্ভ বিস্ফোরণের সময় বেশ কিছু বাড়িঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। কয়েকটি নলকূপে পানির সঙ্গে মাটি উঠে আসে। এতে স্থানীয়দের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিস্ফোরণের সময় অনেকে আতঙ্কিতও হন। তাই এ জরিপে ক্ষতিপূরণ দাবি করে এলাকাবাসী গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেয়।
ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ইমাম হোসেন জানান, কমলগঞ্জের জনবসতিতে কিছু ঘরের দেয়ালে ফাটলের বিষয়টি তারা জেনেছেন। যাচাই-বাছাই করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘শুধু এই ক্ষতিপূরণ নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এরই মধ্যে মৌলভীবাজার জেলার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোম্পানির পক্ষ থেকে ক্রীড়াসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।’