Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:47 am

মৌসুমি দারিদ্র্য রোধে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো হোক

মঙ্গা বা মৌসুমি দারিদ্র্য একসময় ছিল দেশের উত্তরাঞ্চলের নৈমিত্তিক ব্যাপার। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুরের দরিদ্র মানুষ চরম মাত্রায় সংকটে ভুগতেন। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর সে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে লাঘব হতে থাকে। তবে এ অঞ্চলে এখনও মন্দা বা মৌসুমি আকাল বিদ্যমান বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এ ধরনের দারিদ্র্য নিরসনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা আরও জোরদার করা উচিত বলে মনে করি।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘বিআইডিএসের অনুষ্ঠানে বক্তারা: দেশের উত্তরাঞ্চলে এখনও মৌসুমি দারিদ্র্য বিদ্যমান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় এখনও মঙ্গার মতো দারিদ্র্য বিদ্যমান। সাধারণত এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকা এখনও কৃষিনির্ভর। আর কৃষি ফসলের মধ্যেও এ অঞ্চলে ধানের উৎপাদনই বেশি হয়। ফলে ধান লাগানো ও ধান মাড়াই ব্যতীত অন্য সময়ে এ অঞ্চলের মানুষের তেমন কাজ থাকে না। এ সময় শ্রমের মজুরিও হ্রাস পায় ব্যাপকহারে। ফলে তারা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিনাতিপাত করেন। এমনকি অনেক পরিবার তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীও জোগাড় করতে পারে না। এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে বিকল্প কর্মসংস্থান ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করা উচিত বলে মনে করি।

মৌসুমি দারিদ্র্য ও বয়সভিত্তিক দারিদ্র্য বিবেচনায় নিয়ে সে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। তাতে এ নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় যত সংখ্যক মানুষকে সহায়তা দেয়া হয়, প্রকৃতপক্ষে সহায়তা পাওয়ার যোগ্য মানুষের সংখ্যা তার চেয়েও অনেক বেশি। তাছাড়া যে পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়, তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এমন পরিস্থিতিতে মৌসুমি দারিদ্র্য নিরসনে লাগসই প্রকল্প গ্রহণ করা আবশ্যক।

মূলত কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার ওপর গবেষণা পরিচালনা করে বিআইডিএসের ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। তবে এমন মৌসুমি দারিদ্র্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বিদ্যমান বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বিশেষ করে হাওর অঞ্চল ও উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে নানামুখী দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এসব মানুষের একটি শক্তিশালী ডেটাবেজ তৈরি করে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সহায়তার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে মনে করি।

২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে। এসব লক্ষ্য অর্জন করতে হলে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় দেশের সব মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করা দুরূহ হবে বৈকি। কাজেই বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।