Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 6:51 pm

মৌসুমে বিক্রি ১০ কোটি চারা

শীতকালীন সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি। এ সময় এর চাহিদা থাকে সবার কাছে। এ চাহিদা পূরণে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের শমেষপুর গ্রামের কৃষক প্রায় অর্ধশত বছর ধরে এর চারা উৎপাদন ও বিক্রি করছেন। দিন দিন বাড়ছে এর উৎপাদন। অর্থনৈতিকভাবে সফল হচ্ছে কয়েকশ পরিবার।
প্রতিবছর বর্ষার শেষ হতে পুরো শীত মৌসুম এখানকার কৃষক উৎপাদন করেন কোটি কোটি কপির চারা। সারা দেশসহ পার্শ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকেও অনেক চাষি এখানকার চারা নিয়ে যান। এক্ষেত্রে বেসরকারি বীজ প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের সহযোগিতা করে। একই সঙ্গে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় চাষির মুখে থাকে হাসি।
শমেষপুর গ্রামের একাধিক কৃষকের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, স্বাধীনতার কিছু আগে প্রথম এখানে কপি চারা উৎপাদন শুরু হয়। এরপর থেকে প্রতিবছরই বাড়ছে চারা উৎপাদন। চাষি আবুল হাশেম জানান, কপি চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমে জমি বীজ রোপণের উপযুক্ত করে তুলতে হয়। এক্ষেত্রে লম্বায় ১২ ও প্রস্থে আড়াই হাত সাইজের জমি তৈরি করতে হয়। এটিকে বিট বলা হয়। প্রতিটি বিটে বীজ রোপণের ২০ দিনে চারা বিক্রির উপযুক্ত হয়ে উঠে।
ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক জমিতে আসেন। অনেকে জমির পাশে ঘর বানিয়ে রাতযাপন করেন ঝড়-তুফান বা বৃষ্টি থেকে চারা নিরাপদ রাখতে। অনেকে সারা দিন পরিচর্যা কিংবা বিক্রির পর পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন। মোট কথা, সারা দিন জমি আর চারা পরিচর্যাসহ বিক্রিতে সময় কাটে কৃষকের।
কপি চারা বিক্রেতা কাসেম জানান, আগস্টের শুরুতে জমি পরিচর্যার কাজসহ চারা উৎপাদন শুরু হয়ে যায়। প্রায় প্রতিদিন চট্টগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, বরিশাল, খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও ত্রিপুরার বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে এখানে এসে চারা কেনেন।
উনবিংশ শতাব্দীর ৫০ দশকের তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় ও ঢাকা মোহামেডান ফুটবল দলের কৃতী খেলোয়াড় ময়নামতির হুমায়ুন কবীর জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের কিছু আগে থেকে শমেষপুর গ্রামে পাহাড়ের ঢালে কৃষকদের বিভিন্ন তরিতরকারির চারা উৎপাদন করতে দেখেছি। মোতাহের নামের এক চাষি জানান, বর্তমানে প্রতি হাজার চারা এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ক্রেতার সমাগম যত বাড়তে থাকে, দামও তখন বেশি থাকে। একসময় হাজারপ্রতি চারা দেড় হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়। চাষিরা জানান, এখানকার কৃষক হাইব্রিড জাতের বীজের চারা বিক্রি করেন। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঝুরফুর, ট্রেসার, মাউন্টেন, কেকে জাতের চারা। চাষি আবুল হাশেম জানান, এখানকার কমপক্ষে ১০০ পরিবার কপি চারা উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, কমপক্ষে পাঁচ হাজারের বেশি বিটে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রতিটি বিটে কমপক্ষে পাঁচ হাজার চারা করে পুরো মৌসুমে প্রতিটি বিটে চার থেকে পাঁচবার করে চারা উৎপাদন হয়। এতে প্রতি মৌসুমে কমপক্ষে আট থেকে ১০ কোটি চারা উৎপাদিত হচ্ছে।
স্থানীয় তথ্যে জানা যায়, শমেষপুর গ্রামের মোতাহের, হাশেম, কাসেম, আনোয়ার, রাসেল, মোবারক, ইকবাল, মিন্টু প্রমুখ চাষি রয়েছেন, যাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে ৫০ থেকে ১৫০টি করে বিট। এ থেকে প্রত্যেক কৃষক বিপুল অঙ্কের টাকা আয় করেন। বিভিন্ন বেসরকারি বীজ কোম্পানির প্রতিনিধি এসে তাদের বাজারজাত করা বীজ সরবরাহের পাশাপাশি চারার গুণগত মান ও উৎপাদিত ফসলের বিষয়েও কৃষকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন।
কপি চারার পাশাপাশি এখানে টমেটো, মরিচ, লাউ, কুমড়ো ও বেগুণের চারা বিক্রি হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উন্নয়ন কর্মকর্তা আবদুল হাদি জানান, আমাদের সব ইউনিয়নে ব্লক সুপারভাইজার রয়েছেন। কৃষক আমাদের কাছে এলে অবশ্যই সেবা দিতে বদ্ধপরিকর।

মামশাদ কবীর