মৌ চাষে ভাগ্য বদল

এমএ শাহরিয়ার, বান্দরবান: বান্দরবানে পাহাড়ের গ্রামাঞ্চলে সম্ভাবনাময় মৌ চাষ করে ভাগ্য বদলেছে অনেকের। বাড়ির আঙিনায় মৌ চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে পার্বত্য এ জনপদের সাত উপজেলায়। স্বল্প খরচে অধিক মুনফা হওয়ায় মৌ চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে পাহাড়ি গ্রামগুলোয়। তবে এখনও সরকারিভাবে মৌ চাষ সম্প্রসারণে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাননি প্রশিক্ষিত মধুচাষিরা।

কৃষি বিভাগ ও চাষিদের তথ্যমতে, মৌ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে বান্দরবান জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে মৌচাষি কল্যাণ সমিতির সহযোগিতায় ১৪ হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উদ্যোগে ৪০ জন মৌচাষিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকেও মৌ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। চাষিদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে মৌচাষি কল্যাণ সমিতি সমবায় বিভাগ থেকে নিবন্ধন নেয়।

এদিকে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের তেঁতুলিয়াপাড়া হয়ে উঠেছে মৌ চাষের গ্রাম। স্থানীয়দের ভাষায়, মধু গ্রাম। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নেন গ্রামের বাসিন্দা মিগ্য মারমা। তার সফলতায় তেঁতুলিয়াপাড়া পাহাড়ি গ্রামের ৩৪টি পরিবারের মধ্যে এখন ২৮টি পরিবারই মধু চাষে সম্পৃক্ত। এ মৌসুমে তেঁতুলিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৭০ থেকে ৭৫ কেজি পর্যন্ত মধু আহরণ করা হয়েছে। কোনো ধরনের প্রক্রিয়া ছাড়াই ভেজালবিহীন এই খাঁটি মধু বান্দরবান বাজারসহ আশপাশের হাটবাজারগুলোয় বিক্রি হয়। প্রতি কেজি খাঁটি মধু বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায়।

সফল মধু চাষি মিগ্য মারমা বলেন, ‘আমার সফলতায় উদ্বুদ্ধ তেঁতুলিয়াপাড়া গ্রামের ২৮টি পরিবার মধু চাষে জড়িয়ে পড়েছে। বাড়ির আঙিনায় বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা বাক্সে মধু চাষ করা হচ্ছে। উৎপাদিত মধু সংগ্রহ করে বাজারে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করি পাইকারি দামে। কিন্তু হাট-বাজারগুলোয় চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা মধু ব্যবসায়ীরা ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন। স্বল্প খরচে মধু চাষ লাভজনক। তবে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে ব্যাপকভাবে মধু চাষ করা সম্ভব।’

বান্দরবান মধুচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলী আহমদ বলেন, ‘সদরের কাইচতলী, সুলতানপুর, গেজমনিপাড়া, রোয়াংছড়ির আমতলী তঞ্চঙ্গ্যাপাড়া, থানচি মরিয়মপাড়া, আলীকদম নয়া মারমাপাড়া, পান বাজার ত্রিপুরাপাড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি দোছড়ি এলাকায় মধু চাষ হচ্ছে। বাড়ির আঙিনায় বা চাষের জমিতে বাক্সে মধু চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই অঞ্চলে। তবে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মধু চাষিরা কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছেন না। এতে অনেকে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’

এ বিষয়ে বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এম. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘মৌচাষিদের কৃষি বিভাগের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে নিয়মিত। চাষিদের প্রকল্প থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। মৌচাষিদের মূলত উপজেলা পর্যায়ের দপ্তরগুলো থেকে যাবতীয় পরামর্শগুলো দেয়া হয়।’ সরকারিভাবে মৌচাষিদের ঋণ দেয়ার ব্যাপারেও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০