ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

ম্যাজিস্ট্রেটের উপর হামলা: এখনও অধরা আসামীরা

এস এম সাইফুজ্জামান

রবিউল আউয়াল রবি, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপর হামলার ঘটনার ৬ দিন পেড়িয়ে গেলেও এখনও অধরা রয়েছে আসামীরা। ঘটনার পর ম্যাজিস্ট্রেটের নির্বাহী আদেশ অমান্য করে মামলা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

গত ১১ নভেম্বর ময়মনসিংহের তিনটি উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ফুলবাড়িয়া উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে ম্যাজিস্ট্রেটের উপর হামলাসহ জাল ভোট প্রদান, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আদেশপত্র সূত্রে জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ী ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনে ছিলেন মুক্তাগাছা উপজেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার(ভূমি)মাসুদ রানা। ভোট চলাকালীন বেলা ১২ টার দিকে নৌকা প্রতীকের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এস এম সাইফুজ্জামান দলবলসহ লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে জোরপূর্বক ওই কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করে। এ সময় ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের বাধার মুখে কিছু নির্বাচনী সরঞ্জাম চুরি করে নিয়ে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যায় তারা। এরপর ভোট গ্রহণ শেষে বিকাল ৪ টার দিকে আবারও ভোট কেন্দ্রে ঢুকে সাইফুজ্জামান সহ অজ্ঞাতনামা আরো প্রায় ৫শতাধিক ব্যক্তি দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে আহত করে এবং সরকারি গাড়ি ভাংচুর করে। পরে বিজিবি’র মেজর জুবায়ের সালাউদ্দিন, র‌্যাব-১৪ এর ডিএডি ইবাদূত ও অন্যান্যরা অতিরিক্ত ফোর্সসহ আহত ম্যাজিস্ট্রেট ও ব্যালট বাক্স উদ্ধার করে পুনরায় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ফিরে যান।

এ ব্যপারে ফুলবাড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিলরুবা ইসলাম বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর দেখি চেয়ারম্যানের লোকজন আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঘিরে রেখেছে আর ইটপাটকেল ছুড়ছে, আমরা কোনভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরছিলাম না।’

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিজিবি’র মেজর জুবায়ের সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি হামলায় আহত ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি এবং সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।’

ঘটনা প্রসঙ্গে র‌্যাবের এডিশনাল এসপি হান্নানুজ্জামান বলেন, ‘আমরা হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উদ্ধার করি।’

ভুক্তভোগী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান দলবলসহ জোরপূর্বক ভোট কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোট দিতে চাইলে আমরা বাধা প্রদান করি। তাতেই তারা আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি-ধামকি ও গালাগালি শুরু করে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর ভোট গ্রহণ শেষে বিকাল ৪ টার সময় আছিম ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তা অবরোধ করে চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রায় ৫ শতাধিক স্থানীয় লোকদের সাথে নিয়ে ভোট কেন্দ্রে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে আমার উপর অতর্কিত হামলা করে। হামলায় আমি অচেতন হয়ে পড়ি। পরে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা আমাকে উদ্ধার করে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।’

মামলা প্রসঙ্গে জানতে নৌকার পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম সাইফুজ্জামানের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাইফুজ্জামানের ও তার দলবলের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করা, সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া, খুনের উদ্দেশ্যে সরকারি কর্মচারীদের উপর হামলা করা, ইচ্ছাকৃত অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা, অবৈধ বাধা প্রদান ও পথ অবরোধ করার কারণে দাখিলকৃত অভিযোগটি এজাহার হিসাবে গণ্য করে ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোল্লা জাকির হোসেন কে নিয়মিত মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেন মাসুদ রানার আদালত। ঘটনার দিন তিনটি মামলা নেয়ার নির্দেশ থাকলেও ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ অমান্য করে মামলা নেয়নি ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। পরে ঘটনার দুইদিন পর গত ১৩ নভেম্বর এসআই জ্যোতিষ চন্দ্র দেব বাদি হয়ে আসামী নৌকার পরাজিত প্রার্থী সাইফুজ্জামানসহ অজ্ঞাত ৫শতাধিক জনের বিরুদ্ধে একটি ম্যাজিস্ট্রেটের আদশের ৩টি মামলার যায়জায় ১টি নিয়মিত মামলা করেন। মামলা প্রসঙ্গে ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোল্লা জাকির হোসেন বলেন,‘ আমাদের কাছে ১২ তারিখ আদালতের মামলার আদেশ আসে, এরপর ১৩ তারিখ মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। আর আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০