নিজস্ব প্রতিবেদক:‘পুঁজিবাজারে যদি কোনো দুই নম্বরি হয়ে থাকে, সেটা পুরো পৃথিবীতেই সবার আগে স্টক এক্সচেঞ্জ ধরতে পারে। এসইসি তো অনেক পরের বিষয়। প্রথমেই ধরবে স্টক এক্সচেঞ্জ। তাদের ওখানেই তো প্রতিদিন লেনদেন হয়। যেকোনো ধরনের অনিয়মের লেনদেন দেখলে বুঝতে পারা যায়। পুঁজিবাজারে যে কোম্পানি বন্ধ এবং সবাই সেটা জানি, তারপরও সেই কোম্পানির দর বাড়ে। কারা এসব কোম্পানির শেয়ার কেনে এবং কারা বিক্রি করে, তা স্টক এক্সচেঞ্জ জানে। এখানে যে ম্যানুপুলেশন হচ্ছে, লুকিয়ে কেউ করছে না; কিন্তু এর অ্যাকশন হচ্ছে না।’ এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
গতকাল ‘পুঁজিবাজারের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ওয়েবিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এবং ডিসিসিআই সভাপতি সামস মাহমুদ অংশ নেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমবিএর ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান।
সালমান এফ রহমান বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। পুঁজিবাজারের দায়িত্ব শুধু সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসির, আর স্টক এক্সচেঞ্জ শুধু বসে থাকবে, তা নয়। তাদের শক্তিশালী হতে হবে।
তিনি বলেন, এই যে প্রতিদিন স্টক এক্সচেঞ্জের চোখের সামনে দিয়ে ও নাকের নিচে ম্যানুপুলেশন হচ্ছে, তারা কী অ্যাকশন নিয়েছে। তাদেরই ব্রোকাররা এসব করে আসছে। তো কী ব্যবস্থা নিয়েছে? তাই আমাদের সরকারকে দোষারোপের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আনতে হবে। পরিপক্ব বাজারের দিকে যেতে হলে এটা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আপনি বিনিয়োগ করেছেন, আপনাকেই জেনে-শুনে করতে হবে। লাভ-লস আপনার। আমার কাছেও অনেক লোক বলে লস করেছি। ওই সময় আমি বলি আপনি কত মুনাফা করেছেন, তা বলেন। বিও অ্যাকাউন্ট চাই বিশ্লেষণের জন্য। তখন বলি, আপনি কি শুধুই লস করেছেন? আপনি তো যখন লাভ ছিল, তখন বিক্রি করেননি, লোভের বশবর্তী হয়ে আরও মুনাফার আশায় বসেছিলেন। এখন সরকারের দোষ দেন। এই মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা থেকে আমাদের বের হতে হবে। যারাই বিনিয়োগ করবে, তাদের জেনে-শুনে বিনিয়োগ করতে হবে।’
বাংলাদেশের বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বড় দুর্বলতা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অবদান খুবই কম। কমিশন বন্ড মার্কেট উন্নয়নে কাজ করছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা খুবই দরকার।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘আমাদের হাতে গত দু-তিন বছরের যত পেন্ডিং প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ফাইল ছিল, তা প্রায় শেষ করে ফেলেছি। সামনের দিনগুলোয় আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে তিন মাসও সময় লাগবে না। কেউ যদি সঠিক অ্যাকাউন্টস ও কাগজপত্র জমা দেয়, তাহলে এক মাসের মধ্যেই করে দিতে পারব।’
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘ভালো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) দেখে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে আমাদের ইতিবাচক মনোভাব আছে। আমরা ভালো আইপিও দিতে গিয়ে দেখি বিগত কত বছর ধরে একটি কোম্পানির ভালো ব্যবসা করে আসছে, কত সময়ের মধ্যে পরিশোধিত মূলধনের পরিবর্তন ও অ্যাকাউন্টস। সুতরাং আমরা ভালো কোম্পানিকে আইপিও দেওয়ার চেষ্টা করছি। ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে দিচ্ছি। এক্ষেত্রে কেউ যদি কারসাজি করে থাকে, তাহলে শাস্তির ব্যবস্থাও করছি। সামনের দিনগুলোয় ভালো ভালো কোম্পানির আইপিও দিতে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারি কোম্পানি আনার চেষ্টা করছি। তবে এক্ষেত্রে আস্তে-ধীরে চলার নীতিতে কাজ দেখতে পাচ্ছি। আমরা চাপ প্রয়োগ করে দ্রুত আনার চেষ্টা করছি। আমরা আইপিওর কাজ করতে গিয়ে অনেক কাগজের ঘাটতি পাই। আবার যা পাই, সেখানে ভুল থাকে। এগুলো দিতে আসলে আবার অনেক সময় চলে যায়। এক্ষেত্রে আমাদের অফিসে বিলম্ব হয় না। কাগজপত্র যাচাই করতে গিয়ে বিলম্ব হয়। এতটুকু কথা দিতে পারি, আমাদের অফিসে বেশি সময় লাগবে না।’
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের এই বাজারে ডে ট্রেডিংয়ের জন্য যেন কেউ না আসে। ডে ট্রেডিং করতে গেলেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাই। একটু দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নিয়ে আসলে ভালো হয়।’ তিনি বলেন, ‘মার্জিন ঋণের সুদ হার বেশি নিয়ে ব্রোকারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যে হারে মার্জিন দেয়, সেটাকে আমরা অযৌক্তিক বলে মনে করছি।’
অনেকেই আরও অনেক দায়িত্বের কথা বলেছেন বলে জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের লোকবল খুবই কম। সব যদি আমাদের দিয়ে দেন, তাহলে করতে পারব না। এত বড় বাজারে সবাই যদি বিএসইসির কাছেই সব আশা করে, তাহলে বাস্তবায়ন করাটা কঠিন। বাজারকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।’