ম্যালেরিয়া থেকে সাবধান

প্রাণঘাতী রোগ ম্যালেরিয়া। সংক্রমিত বাহক স্ত্রী অ্যানোফেলিস মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে তখন তার রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্রবেশ করে। অ্যানোফেলিস মশার প্রথম পছন্দ মানবদেহের রক্ত। মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। দেশে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে।

লক্ষণ: শীত শীত লাগা, অল্প জ্বর, মাথার ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিদ্রার মতো উপসর্গ শুরু হয়। এরপর নিয়মিত ও নির্দিষ্ট বিরতিতে কাঁপুনি দিয়ে প্রচণ্ড জ্বর (১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে) ম্যালেরিয়ার প্রধান লক্ষণ। অত্যধিক ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে বলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে কমে যায়। এরপরে আবার জ্বর আসে। জ্বর এক, দুই ও তিন দিন পরপর হতে পারে। এ ছাড়া প্রচণ্ড গায়ে ব্যথা, মাথার ব্যথা, অরুচি, বমি বা বমিভাব, তলপেটের ব্যথা, ক্লান্তিভাব, খিঁচুনি, অনিদ্রা, অত্যধিক ঘাম, রক্তশূন্যতা, যকৃৎ ও প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া অন্যতম। এ পর্যায়ে রোগীর দেহে জীবাণুর সংখ্যা বেড়ে গেলে রক্তে লোহিত রক্তকণিকা দ্রুত ভাঙতে থাকে, ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। প্লীহা ও মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।

জটিলতা: ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার জটিলতা সবচেয়ে বেশি। রক্তের লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস করার ক্ষমতা অধিক বলে অন্য প্রজাতির তুলনায় অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। এমনকি মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে। ম্যালেরিয়া রোগের জটিলতম ধরন হলো ‘ম্যালিগনেন্ট ম্যালেরিয়া’। দ্রুত সঠিক চিকিৎসা শুরু করা না হলে মারাত্মক রক্তশূন্যতা, জন্ডিস, মস্তিষ্কে প্রদাহ, কিডনির সমস্যা, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, অচেতন হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব লাল হওয়া, রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, খিঁচুনির মতো জটিলতা প্রকাশ পায় এবং মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যায়।

প্রতিরোধ: সচেতন থেকে মশার কামড় থেকে দূরে থাকতে পারলে এ রোগ সম্পূর্ণ প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য। দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। ঘরের আশপাশ, ফুলের টব, খালি ড্রাম, ড্রেন ও জলাবদ্ধ এলাকায় পানি জমে যেন মশা বংশ বিস্তার করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে মশাবহুল স্থানে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। দরজা-জানালায় মশারোধী জাল এবং শরীরে প্রতিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন।

ডা. কাকলী হালদার

সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০