ম্যালেরিয়া এখনও সমস্যা

গতকাল পালিত হয়েছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। ২০০৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ দিবস প্রবর্তন করে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে জনসাধারণের মধ্যে ম্যালেরিয়া সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে তাদের উদ্বুদ্ধ করা। বিশ্বে প্রতিবছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে লাখো মানুষ মারা যায়। ২০২০ সালে ছয় লাখ ৭০ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় মারা যায়। এর ৮০ শতাংশ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। ৯৫ শতাংশ ঘটে আফ্রিকায়। বাংলাদেশেও এর প্রকোপ কম নয়।
প্লাসমোডিয়াম নামক জীবাণু দিয়ে হয় এই রোগ। যথাসময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না করলে এটি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। এ জীবাণুর পাঁচটি ধরন রয়েছে। এর মধ্যে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত রোগীর জটিলতা বেশি। ম্যালেরিয়া হলে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর ওঠে। প্রথম দিকে জ্বর মৃদু মাত্রার হলেও পরবর্তী সময়ে তীব্র মাত্রায় জ্বর শুরু হয়। ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে যায়। আবার জ্বর আসে। কোনো কোনো ম্যালেরিয়ার আক্রমণে একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর জ্বর আসে। জ্বরের পাশাপাশি মাথাব্যথা, অরুচি, বমি প্রভৃতি লক্ষণ ফুটে ওঠে। তীব্র ম্যালেরিয়ায় রোগী অচেতন হয়ে পড়ে। শুরু হতে পারে খিঁচুনি। রোগীর রক্তে গøুকোজ কমে যায়। কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। ফুসফুসে পানি জমে। রক্তে অ¤ø ও ক্ষারের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। দেখা দেয় রক্তশূন্যতা। অনেক সময় শুরু হতে পারে গুরুতর ডায়রিয়া। কোনো কোনো ম্যালেরিয়ায় একবার আক্রান্ত হলে বারবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ যকৃতে এই জীবাণু সুপ্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল থেকে যেতে পারে।
শিশু, অন্তঃসত্ত¡া নারী, বয়োবৃদ্ধ এবং যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল, তারা ম্যালেরিয়ার সহজ শিকারে পরিণত হন। গর্ভবতী মায়েদের ম্যালেরিয়া হলে গর্ভের সন্তানের নানা জটিলতা হতে পারে। গর্ভপাত, গর্ভস্থ শিশুর ওজন হ্রাস, অথবা মৃত নবজাতক প্রসবের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
প্রতিরোধ: ম্যালেরিয়া প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সময়মতো ও দ্রæত চিকিৎসা নিলে এ রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়। ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকা থেকে ফেরত ব্যক্তির জ্বর হলে অবশ্যই ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করাতে হবে। বাংলাদেশের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও ময়মনসিংহের কিছু এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অবশ্যই রাতে মশারির ভেতর ঘুমাতে হবে, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘরের ভেতরে মশকবিরোধী স্প্রে করা যেতে পারে। রাতে বাইরে বের হলে যাতে মশা না কামড়ায় সেজন্য ফুলহাতা শার্ট-প্যান্ট পরতে হবে।

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০