বছরে গড়ে প্রায় চার লাখ প্রাণ ঝরে যায় ম্যালেরিয়ার কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ম্যালেরিয়া প্রতিবেদন ২০১৬ অনুযায়ী আরও একটি ভয়াবহ তথ্য জানা গেল। প্রতিবেদন সূত্রে, ২০১৫ সালে ২১২ মিলিয়ন মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। ওই বছর চার লাখ ২৯ হাজার মানুষ এ রোগে মারা যায়। শুধু কি তা-ই? ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ।
আমাদের দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ১৩টি জেলা ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে এ হার বেশি।
স্ত্রীজাতীয় এনোফিলিস মশার কামড়ে ছড়ায়Ñএমন এক ধরনের সংক্রামক জ্বর হচ্ছে ম্যালেরিয়া। এ রোগের জীবাণুর নাম প্লাসমোডিয়াম। মশার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্যের কাছে ছড়াতে পারে রোগটি।
জীবাণুর ধরন বুঝে ম্যালেরিয়াকে ফেলসিপেরাম, ভাইভ্যাক্স, ওভালি ও ম্যালেরি হিসেবে ভাগ করা যায়। তাছাড়া রোগের লক্ষণ অনুসারে একে সাধারণ বা জটিলতাবিহীন ম্যালেরিয়া ও মারাত্মক ম্যালেরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ম্যালেরিয়া ফেলসিপেরাম ধরনের।
সাধারণ ম্যালেরিয়া জ্বর থেমে থেমে নির্দিষ্ট সময়ে আসে। কাঁপুনি দেয়, গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। হজমে গোলযোগ দেখা যায়। শরীর দুর্বল অনুভূত হয়, ক্লান্তি লাগে। ক্ষুধা কমে যায়। এ সময় রোগীকে হালকা ধরনের খাবার দিতে হয়।
মারাত্মক ম্যালেরিয়ার বেলায় জরুরি চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। সেরিব্রাল বা মারাত্মক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তশূন্যতা, কিডনি বৈকল্য, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিস, খিঁচুনি, রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে রোগী নিজে বসতে পারে না। দাঁড়াতে কিংবা হাঁটতে পারে না। বার বার বমি হয়। রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
জটিলতাবিহীন ফেলসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় জ্বর ছাড়া তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। ম্যালেরিয়া উপদ্রুত এলাকায় কোনো রোগীর জ্বর থাকলে কিংবা জ্বরের ইতিহাস ছাড়া অন্য কোনো লক্ষণ না থাকলে তার চিকিৎসা শুরুর আগে রক্ত পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা যায়।
মারাত্মক ম্যালেরিয়ায় ভোগা রোগীকে মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। এদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ধরনের রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসার জন্য যেতে হবে
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে
প্রতিরোধ
মশার বৃদ্ধি রোধে সমন্বিত পদ্ধতি ব্যবহার করা। উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই
জলাধার, টব, টায়ার, ডাবের খোসা, রেফ্রিজারেটরের ট্রে, ফুলদানি প্রভৃতি পানিশূন্য রাখা। অর্থাৎ কোথাও যেন দুই দিনের বেশি পানি না জমে থাকে
মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার নানা উপায় বের করা
কীটনাশকে ডোবানো মশারি ব্যবহার করা।