যে কোনো দেশের সরকারের প্রধান লক্ষ্যই হলো জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। জনকল্যাণের লক্ষ্যেই সরকার নানা ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে। এসব প্রকল্পের মধ্যে এমন কিছু প্রকল্প আছে, যা সমাজে সম্পদ ও আয় বৈষম্য হ্রাসে সহায়তা করে। তেমনই একটি প্রকল্প ‘বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প (১ম সংশোধিত)’। এ প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য ছিল কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলার ৩৪টি উপজেলায় মৎস্য চাষ ও মৎস্য খাতে উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এমন জনসম্পৃক্ত একটি প্রকল্পে এমন অনিয়ম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল এ বিষয়ে ‘জেলেদের কর্মসংস্থান: বিকল্প আয়বর্ধনমূলক উপকরণ ক্রয়ে অনিয়মিত ব্যয় কোটি টাকা’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, প্রকল্পটির ক্রয়প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি কেনাকাটায় যেসব নিযম-কানুন অনুসরণ করার বিধান রয়েছে, তা উপেক্ষা করে বিভিন্ন উপকরণ কেনা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের দাবি রাখে বলে মনে করি।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না যে, দেশের সাধারণ জনগণের করের অর্থে তাদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করা হয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের চাকরিতে নিয়োগ দানের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো জনগণের জন্য উপযুক্ত সেবা নিশ্চিত করা। আর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত একটি সরকার সংবিধান মোতাবেক কর্মকমিশনের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। তারা সকল কার্য সম্পাদন করেন রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে। এ আদেশ প্রকারান্তরে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতেই তাদের ওপর ন্যস্ত হয়েছে। তাছাড়া নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পরিপালনের জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অঙ্গীকারবদ্ধও বটে। দায়িত্বপালনকালে তাদের সে শপথ স্মরণে রাখা অপরিহার্য বলে মনে করি। কিন্তু কোনো ক্রয়প্রক্রিয়া বা কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে যখন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, তখন কর্মচারীরা তাদের শপথ ঠিক মতো পালন করছেন না বলেই প্রতীয়মান হয়।
একটি দেশে কর ব্যবস্থার মূল দর্শন হওয়া উচিত বিত্তবানদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা সমাজের অপেক্ষাকৃত অস্বচ্ছল মানুষের মাঝে বিতরণের মাধ্যমে অসমতা হ্রাস করা। সে জন্য অর্থনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য এ ধরনের প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নজরদারি কম থাকায় অনিয়মের সুযোগ বাড়ছে বলে অনুমান। যেসব জনগোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে এসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তারা যাতে জনগণের করের অর্থের সুফল পায়, তা নিশ্চিত করা সরকারের একান্ত কর্তব্য। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে বিশ্বাস।