নিজস্ব প্রতিবেদক: মৎস্য খামারের আড়ালে সম্পদ গোপন করেছেন এক রাজস্ব কর্মকর্তার স্ত্রী। এক কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন তিনি। জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। এসব অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে তাসনুভা চৌধুরী ও তার স্বামী পানগাঁও শুল্ক ও গোয়েন্দা সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল মান্নান মজুমদারকে আসামি করা হয়েছে।
গত বুধবার বিকালে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এ মামলাটি দায়ের করেন সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন। উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তাসনুভা চৌধুরী ৭৬ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৩ টাকার সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। অনুসন্ধানকালে তাসনুভা চৌধুরীর ১ কোটি ৪৭ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ, ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ৭১৮ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২ কোটি ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ২১৮ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তিনি সম্পদ বিবরণীতে এক কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। এ ছাড়া এক কোটি ৬১ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৮ টাকার আয়ের উৎস কম পাওয়া যায়।
দুদক অনুসন্ধানে জানতে পারে, তাসনুভা চৌধুরী চার বছরে মৎস্য খামার থেকে মোট ৮৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৪ টাকা আয় করেন। কিন্তু লক্ষ্মীপুরের রামগতির সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী তাসনুভা চৌধুরীর নামে মৎস্য বিভাগ থেকে মাছ চাষ করার জন্য কোনো নিবন্ধন দেয়া হয়নি। রামগতি উপজেলায় মৎস্য চাষের যে অনুশীলন এবং বাংলাদেশে গড়ে হেক্টরপ্রতি মাছের যে সর্বোচ্চ উৎপাদন সে অনুযায়ী ৪ বছরে ৪.২১ একর আয়তনের জলাশয়ে মাছ চাষ করা হলে আনুমানিক সর্বোচ্চ উৎপাদিত মাছের পাইকারি বিক্রয়মূল্য ৪০ লাখ ৭০ হাজার টাকা হতে পারে। তাসনুভা চৌধুরী মাছের খামার থেকে ৪২ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৪ টাকা অতিরিক্ত আয় দেখিয়েছেন বলে তদন্তে উঠে আসে।
অন্যদিকে, দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তিনি এক কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, তাসনুভা চৌধুরী মাছের খামার থেকে ৪২ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৪ টাকা অতিরিক্ত প্রদর্শিত আয় ও দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে গোপন করা ১ কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৫ টাকা মূলত আসামি আবদুল মান্নানের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত। স্বামীর ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস গোপন করার উদ্দেশ্যে আসামি তাসনুভা চৌধুরী তার আয়কর নথিতে মাছ খামার থেকে আয় হিসেবে ওই টাকা প্রদর্শন এবং দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
আসামিরা দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে এক কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন ও এক কোটি ৬১ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে ভোগ-দখল করছেন। দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২), ২৭ (১) ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪ (২), ও ৪ (৩) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
মৎস্য খামারের বিষয়ে জানতে চাইলে রামগতি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মৎস্য বিভাগ থেকে তারা কোনো নিবন্ধন নেননি। তারা রামগতি উপজেলার চর রমিজ এলাকায় পুকুরে মাছ চাষ করছেন। মাছ বিক্রির কোনো হিসাবও তারা রাখেননি।’
দুদক সূত্রে জানা গেছে, তাসনুভা চৌধুরীর সঙ্গে ২০১০ সালে আবদুল মান্নান মজুমদারের বিয়ে হয়। তিনি আগে চট্টগ্রাম কাস্টমসে এপ্রেইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে পানগাঁও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা।