ময়মনসিংহের মিষ্টি কুলের চালান যাচ্ছে সারা দেশে

ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্য মৌসুমি ফলের পাশাপাশি কুল বা বরই’র আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, নান্দাইল, হালুয়াঘাট, ফুলপুর, গৌরিপুর, ভালুকা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে বরই চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে মুক্তাগাছায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক হারে বরই চাষ বেড়েছে।

অনুকূল আবহাওয়ার কারণে মুক্তাগাছায় এ বছর মিষ্টি বরইয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বিভিন্ন জাতের পাকা বরইয়ে এখন বাজার সয়লাব হয়ে আছে। চাষিরা ভালো দামও পাচ্ছেন। এখানকার বরই এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তাগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়ির আঙিনা, উঁচু ভিটা, পুকুর পাড়, ক্ষেতের আলে লাভজনক ফসল হিসেবে বিভিন্ন জাতের বরই চাষ হয়ে আসছে। অনেকে পরিকল্পিতভাবে বাগান করে মৌসুমি ফসল হিসেবে বরই চাষ শুরু করেছেন। এসব বাগানে স্থানীয় কাশি বরই, মিষ্টি বরই, আপেল কুল, বাউকুল, ইন্ডিয়ান কাশি, দেশি মিষ্টি বরই, নারকেলি বরই, থাইকুলসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের বরই চাষ হচ্ছে। কম শ্রম ও স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় গত কয়েক বছরে মুক্তাগাছায় বরইয়ের আবাদ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। একমাত্র মুক্তাগাছা উপজেলায়ই বছরে কোটি টাকার অধিক মূল্যের বরই উৎপাদন হচ্ছে বলে চাষি পর্যায়ে তথ্য নিয়ে জানা গেছে।

উৎপাদিত বরই বিক্রির জন্য উপজেলার ত্রিমোহনী নতুন বাজার, গাবতলী, কালিবাড়ী, লেংড়া বাজার, চেচুয়া বাজার, কাটবওলা বাজার, রামভদ্রপুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে সাপ্তাহিক হাট বারের দিন আলাদা স্থান নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। এসব বাজারে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে বরই কিনে ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন। বরই বোঝাই গাড়ি যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

মুক্তাগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নারগীস আক্তার ও মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত একাধিক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও চাষিরা জানিয়েছেন, এবছর অনুকূল আবহাওয়া থাকায় বরইয়ের ফলন ভালো হয়েছে।  উৎপাদিত বরই বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে।

কুতুবপুর গ্রামের কুলচাষি নুরুল ইসলাম জানান, অনেক আগে থেকেই বরই চাষ করি। প্রথমে তিনি ঢাকা-৯০ জাতের বরই চাষ করেছিলেন। এখন তিনি আপেল কুল ও বাউকুল চাষ করছেন। ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

চেচুয়া বাজারে বরই বিক্রি করতে আসা আবদুর রহমান জানান, ১০ মণ পাকা মিষ্টি বরই এনে ১৫শ’ টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি করেছি। গত বছর এ বরইয়ের দাম অনেক কম ছিল। লেংড়ার বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, চাষিদের কাছ থেকে কেনা কয়েক ট্রাক বরই বস্তায় ভরে ট্রাকে লোড করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কয়েক শ্রমিক ও পাইকার। পাইকার মহসিন মিয়া জানান, প্রতি বছর এ মৌসুমে ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজার থেকে বরই কিনে থাকি। এ সময় ভালো ব্যবসা হয় বলে জানান তিনি। গাবতলী হাটে গিয়ে কথা হয়, বরইয়ের পাইকার মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, মুক্তাগাছাসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাটবাজার থেকে বরই কিনে তিনি চট্টগ্রাম, ফেনি, কুমিল্লা এলাকায় নিয়ে গিয়ে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করেন। তিনি ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা মণ দরে বরই কিনছেন।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বরই বিদেশে চালান ও প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বরই গ্রাম হিসেবে পরিচিত আড়াইবাড়িয়া গ্রামের চাষি সিরাজুল ইসলাম ফকির বলেন, যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অর্থকরি এ ফসলটি উৎপাদন করেও অনেক সময় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন চাষিরা। ব্যাপক সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে বরইয়ের আবাদ বৃদ্ধি পেলেও চাষিরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন না অনেক সময়। তিনি এ জন্য চাষি পর্যায়ে সহযোগিতার প্রত্যাশা করেন। চেচুয়া বরইয়ের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে প্রতি কেজি বরই খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার জানান, অন্য ফসলের মতো বরই আবাদেও চাষি পর্যায়ে প্রযুক্তিগত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। চাষের ব্যাপারে স্থানীয় কৃষি অফিস তৎপর রয়েছে বলেও তিনি জানান।

 

এম. ইদ্রিছ আলী, ময়মনসিংহ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০