Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:16 am

যখনই দেশ-জাতি আক্রান্ত হয় তখনই ছাত্ররা এগিয়ে আসে-রাবি উপাচার্য

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেছেন, যখনই এই দেশ-জাতি আক্রান্ত হয় তখনই ছাত্ররা এগিয়ে আসে। ছাত্ররা যতবার এগিয়ে আসবে তাদের পাশে শিক্ষকরা থাকবে। এটা আামাদের জোহা স্যার শিখিয়ে গেছেন। যারা পথ দেখায় তারা এগিয়ে থাকে। তাই যেকোনো নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের পথে নামতে হবে।

বুধবার (২৪ আগস্ট) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে ‘ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতন দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

উপাচার্য বলেন, আমরা ছাত্রদের শুধু শিক্ষা দেই না তাদের মধ্যে শুভবোধ সচেতনা তৈরি করে দেই। তারা অন্যায়কে অবলেলায় অস্বীকার করতে পারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে পারে। শিক্ষকরাই পারে তাদের মধ্যে একটি মনুষত্ববোধ তৈরি করতে। সেই মনুষ্যত্ববোধ থেকে ছাত্ররা কিন্তু সেদিন জেগে উঠেছিল তারা। সিরিজ বোমা হামলা, হত্যা, লুন্ঠন ইত্যাদির বিরুদ্ধে রুখে দাড়িঁয়ে ছিলো সেই মনুষ্যত্ববোধের তাড়না থেকে।

আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড.গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে ও রেজিস্টার অধ্যাপক আব্দুস সালাম এর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, কোষাধক্ষ্য অধ্যাপক অবায়দুর রহনাম প্রমাণিক, অধ্যাপক ল মলয় কুমার ভৌমিক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড.দুলাল চন্দ্র বিশ্বাসসহ আরো অনেকে।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র-শিক্ষক সমাজ বাঙালি জাতির সকল আন্দোলন-সংগ্রামে গৌরবময় ভূমিকার অধিকারী। বিশেষ করে প্রতিটি সেনা সমর্থিত স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের আগস্টে দেশে বিরাজমান নিপীড়নমূলক পরিস্থিতিতে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাঙ্গন প্রতিবাদী হয়ে উঠে। তৎকালীন রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি সেই প্রতিবাদ দমন করতে ছাত্র-শিক্ষকদের গ্রেফতার করে নির্যাতন-হয়রানির পথ বেছে নেয়। তাদের বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেয় হয়রানিমূলক মামলা। কিন্তু এক সময় প্রতষ্ঠিত হয় সত্য, সকল ষড়যন্ত্র থেকে ছাত্র-শিক্ষক সমাজ মুক্ত হয়। সেই প্রতিবাদ ত্বরান্বিত করে দেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ।”

সেইদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বর্তমান রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ সদস্য ও তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন বলেন, ২০০৭ সালে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার ছাত্রদের উপর যে নির্যাতন চালিয়েছে তা ইতিহাসে বিরল। দিনের পর দিন আমাদের পালিয়ে থাকতে হয়েছে। এমন কি আমাদের পরিবারে লোকজনের উপর তারা নির্যাতন চালাতেও দ্বিধা করেনি। সেই সময় আমরা যারা তৎকালিন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের কোনো ধরনের সহযোগীতা তো দূরের কথা বরং সেনা বাহিনীর পক্ষ নিয়ে আমাদের উপর হামলে পড়েছিলেন। হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষককে তখন পাশে পেয়েছিলাম। যে শিক্ষকরা সেই দিন মাথা নত করেনি তাদের প্রতি মন থেকে শ্রদ্ধা জানান এই সাংসদ।

এরপর অনুষ্ঠানে তৎকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উপহার বিনিময় করেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার। এছাড়া ২০০৭ সালের ২৪ আগস্ট ক্যাম্পাসে চলমান ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত রিক্সা চালক আফজাল আলির পরিবারে জন্য একটি সহায়তা তহবিল গঠন করা হয়।

প্রসঙ্গত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালে ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রদের সঙ্গে সেনা সদস্যদের সংঘর্ষ বাধে। এসময় অনেক ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ওই সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮ শিক্ষক ও এক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। দুই দিন শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশে সংঘর্ষে অন্তত কয়েকশ জন আহত হন। এরপর থেকে প্রতিবছর ২৪ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতন’ দিবস পালন করা হয়।