যখন পুঁজি বিপদে পড়বে না ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হবে: বিএসইসি চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জানিয়েছেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা যদি বুঝি মানুষের পুঁজি বিপদে পড়বে না, সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেব।

অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ফ্লোর প্রাইস নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কি নাÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘খুব শিগগির একটু শক্ত অবস্থান দেখতে পেলে, তখন আমরা যদি বুঝি মানুষের পুঁজির নিরাপত্তা বিপদে পড়বে না, সঙ্গে সঙ্গে আমরা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেব। খুব তাড়াতাড়ি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার চেষ্টা আমাদের মধ্যে আছে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘অর্থনীতিতে একটা মহাবিপর্যয় আসতে যাচ্ছে, এটা আমরা বুঝতে পারছিলাম। তখনই আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম রিজার্ভের সঙ্গে সঙ্গে এক্সচেঞ্জ রেট ভোলাটিলিটি। এ কারণে আমাদের (পুঁজিবাজার) ইনডেক্স কমে যাওয়া শুরু করে। আমরা তখন আমাদের বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরপত্তার কথা প্রথমে বিবেচনা করি। তখন যে অবস্থা তাতে আমার লাভ-ক্ষতির চিন্তা করব না।’

তিনি বলেন, ‘আগে মানুষের পুঁজিটা নিরাপদ করে দিতে হবে। সেই কারণে আমরা চাইনি যে, এমন কোনো ঘটনা ঘটুক, সেটা আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে আসুক। সে কারণে ইচ্ছা না থাকা স্বত্ত্বেও আমরা সেসময় ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিই। আমরা কখনও চাইনি ফ্লোর প্রাইস দিতে।’

বন্ড মার্কেট উন্নয়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বন্ডের মাধ্যমে আমরা গত দেড়-দুই বছরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি অর্থনীতিতে। যদি আইপিও’র (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের দিতাম, এত টাকা দেয়া সম্ভব হতো না। দ্বিতীয়ত, আইপিওর কোয়ালিটি থাকত না। এখন বন্ড মার্কেট বেশ ভালোভাবে কাজ করছে।’

মার্কেটের খারাপ পরিস্থিতিতেও অনেকে ভালো মুনাফা করেছেনÑএমন মন্তব্য করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবসময় যদি ক্যাপিটাল মার্কেট পিকে থাকে, তাহলে লাভের সুযোগ কমে যায়। বাজার ওঠানামা করলে লাভের সুযোগ বাড়ে।’

তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট টেকনিক্যাল বিষয়, এটা খুব কম মানুষ বোঝে। আমরা ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসির ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। দেশের প্রতিটি বিভাগ আমাদের কাভার করা শেষ, এখন জেলাগুলোয় আমরা বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছি। বিদেশেও আমরা আমাদের দেশের ব্র্যান্ডিং ও ইনভেস্টমেন্ট জোগাড় করছি।

তিনি বলেন, ‘যখন শুরু করেছিলাম তিন বছরে একটা মুহূর্তও পাইনি যে স্বাভাবিক সময়, সব সময় প্রবলেম (সমস্যা)। আগামী ছয় মাস পর নির্বাচন। তিন বছর করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সামনের ছয় মাস নির্বাচন। বাজারে স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ তৈরি করব, সেই সুযোগও পাচ্ছি না। এ রকম একটা মুহূর্তে আমরা যে মর্কেট ধরে রেখেছি, রাখার চেষ্টা করছি, এটা খুব কঠিন কাজ। এত স্টেকহোল্ডার, এত রকমের মানুষ, বিনিয়োগকারী, এত রকমের সমস্যা ব্যালান্স করা বাস্তবতার নিরিখে সত্যিই কঠিন। তারপরও আমরা সবাই চেষ্টা করছি।’

সাংবাদিকদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে আমাদের সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা চলছে। সারাক্ষণ ফোন আসে, ই-মেইল আসে। আপনাদের কাছে অনুরোধ ভুল-ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন।

সরকারি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার বিষয়ে অধ্যাপক শিবলী বলেন, ২৬-২৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা সরকারের কাছে দিয়েছি; বলেছি, এ প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে আসা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কাছেও দিয়েছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে শিগগির বসব।

ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইআরএফের সদস্য মুহাম্মদ মোফাজ্জল। এতে ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু, সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসান ইমাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০