নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে যত্রতত্র শিল্প-কারখানা করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। শিল্প স্থাপনের জন্য কোনো কৃষিজমি নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সম্মেলনের তৃতীয় দিনের তৃতীয় অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, কৃষিজমির বিষয়ে আমাদের আইনেই আছে যত্রতত্র শিল্প-কারখানা করা যাবে না। আমাদের বিসিক শিল্পনগরী আছে, বস্ত্র মিলসহ অনেক শিল্প-কারখানা আছে। সেজন্য আমাদের অনেক জায়গার প্রয়োজন হয়। এ জন্য আমরা অনেক কৃষিজমিও নষ্ট করছি।
তিনি বলেন, আমরা শিল্প এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবেই করছি। কৃষিজমিতে কোনো শিল্প এলাকা হচ্ছে না। আপনারা জানেন, আমাদের জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই পরিকল্পিতভাবে শিল্প পার্ক করছি। এসব পরিকল্পিত শিল্প এলাকায় অবশ্যই বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। এছাড়া ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার নির্দেশনা তো সরকারের আছেই।
অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা অঞ্চলগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময়মতো আমরা ধীরে ধীরে এগুলো সরিয়ে নেব। আমাদের অনেক জায়গা আছে, তাদের সেখানে সরিয়ে নেওয়া হবে। এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, তাই রাতারাতি সরিয়ে নেওয়া যাবে না। তাহলে অনেকে চাকরিবিহীন হয়ে পড়বে। আমরা তো বেকার সমস্যা দূর করতে চাই।
কৃষিজমি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষিজমি নিয়ে আইন আছে। কৃষি জমিতে শিল্প-কারখানা স্থাপন হতে দেওয়া হবে না। এ জন্য যত্রতত্র শিল্প-কারখানা আমরা করতে দেব না। বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অপরিকল্পিত শিল্পনগরীকে যথাস্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। আমাদের জমি অনেক উর্বর। কৃষিক্ষেত্রে সরকার বিশাল সফলতা পেয়েছে।
ভেজাল ও নকল প্রতিরোধে কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকরা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছেন। তারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। তারা যেখানে ভেজাল ও নকল পণ্য পাবেন, সেগুলো ধরবেন। ভেজাল ও নকল নিয়ন্ত্রণে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এগোচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, দালাল ধরতে ডিসিদের সহায়তা চেয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি বলেন, যেসব দালাল বিদেশগামী যাত্রীদের হয়রানি ও প্রতারণা করছে, তাদের ধরা হবে।
ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার সচিবালয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কার্যঅধিবেশন শেষে আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানান তিনি।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ডিসিদের কোনো নির্দেশনা দিইনি, আমি তাদের কাছে সাহায্য চেয়েছি। আমি বলেছি, দালালদের ধরুন, যেসব দালাল গরিব মানুষদের লুটেপুটে দেড় লাখ টাকার জায়গায় সাত লাখ টানা নেয়। আমরা চেষ্টা করছি যাতে পুরো অভিবাসন প্রক্রিয়াটা একটি সিস্টেমে ফেলতে পারি, গরিবরা যাতে সেইফলি যেতে পারে এ ব্যবস্থা যাতে হয়।’
বিদেশগামীদের স্মার্টকার্ড নেওয়াসহ সব প্রক্রিয়া শেষ করতে ঢাকায় আসার বাধ্যবাধকতা থাকায় তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ফলে ডিসিরা এ প্রক্রিয়া জেলায় জেলায় করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে সে প্রশ্ন ছিল মন্ত্রী ইমরান আহমদের কাছে।
তিনি বলেন, ‘প্রস্তাব দিলেও আমরা আগেই কাজ আরম্ভ করেছি। বিদেশগামীদের নিবন্ধনের কাজ হাতে নিয়েছি। একেবারে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার থেকে যাতে তারা নিবন্ধন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা আমরা করব।’
সমুদ্রপথে অবৈধভাবে বিদেশযাত্রা নিয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো পুরো সমুদ্র পাহারা দিয়ে রাখতে পারব না। যারা ওদের নিয়ে যায়, আমরা তাদের চিহ্নিত করে ধরতে পারলে কাউকেই ছাড়ব না।’
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বৈধভাবে বিদেশে গিয়ে মারা যান, তাদের দেশে আনলে এয়ারপোর্টেই আমরা দাফনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে দিই। এরপর কল্যাণ ফান্ড থেকে আরও তিন লাখ টাকা দিই। যারা অবৈধভাবে গেছেন, তাদের নিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়। আমি আসার পর সেখানেও (অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়া কেউ সেখানে মারা গেলে) আমরা খরচটা বহন করি। অনেক টাকা আমরা বিভিন্ন দূতাবাসে পাঠাই মরদেহ বহনের জন্য। বৈধ হোক আর অবৈধ হোক, আমরা চেষ্টা করি সব সময় মরদেহ নিয়ে আসার জন্য।’
বিদেশগামী যাত্রীদের হয়রানি রোধে এজেন্সিগুলোর ভূমিকা থাকতে হবে জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এজেন্সিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছি। আর দালালদের কাট করার একটি সিস্টেম করতে হবে। যারা বিদেশে যেতে ইচ্ছুক, তারা যেন সরাসরি নিবন্ধন করেন। এরপর প্রক্রিয়া হলো, তখন যে টাকা লাগে, তা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বা অন্যান্য ব্যাংকে জমা দিন, মেডিক্যাল ফিসহ সব ধরনের খরচ সেখান থেকে করা হবে।’
যত্রতত্র শিল্প-কারখানা নয়: শিল্পমন্ত্রী
