মো. তাজুল ইসলাম : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেকোনো মানুষকে আকৃষ্ট করবে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় বলেছেন ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।’ গগন ছোঁয়া পাহাড়, পাহাড়ের চূড়া থেকে রমণীর কোমর ছোঁয়া চুলের মতো এঁকেবেঁকে নেমে আসা নদী, সুবিশাল সাগর যেকোনো ভ্রমণপিয়াসীর মনে নাড়া দেবে। বাংলাদেশে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন, সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত অবলোকনের জন্য সমুদ্রকন্যা-খ্যাত সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, রাঙামাটির ছাদ হিসেবে পরিচিত সাজেক ভ্যালি, প্রাচীন স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম নিদর্শন ষাট গম্বুজ মসজিদ, জ্ঞানার্জনের প্রাচীন তীর্থস্থান পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, বাংলার প্রাচীন রাজধানী মহাস্থানগড়, পাহাড়-নদী-ঝরনার মিলনে অপরূপ সুন্দর বান্দরবান। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এত সমৃদ্ধ হলেও পর্যটন শিল্পে অনেকটা পিছিয়ে। অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, যথাযথ বিপণনের অভাবে সমগ্র বিশ্ব দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পর্কে অজ্ঞ। জিডিপিতে দেশের পর্যটন খাতের অবদান মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার বেশি। ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট-২০২০ অনুসারে মোট কর্মসংস্থানের ৮ দশমিক শূন্য সাত শতাংশের সুযোগ তৈরি করছে এই খাত। বর্তমানে পর্যটন বিশ্বের বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ৩৩ শতাংশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস এ শিল্প। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রায় ১০ কোটির বেশি মানুষ তাদের জীবন-জীবিকার জন্য এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। ২০১৯ সালে পর্যটনশিল্প বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার অবদান রাখে, যা বিশ্ব জিডিপির ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯ অনুযায়ী, বন্দর ও বিমান পরিবহন অবকাঠামো, নিরাপত্তা, সংস্কৃতি, বাসস্থান, আর্থিক মান, স্থিতিশীল ভ্রমণের সুযোগসহ ৯০টি মানদণ্ড বিবেচনা করে ১৪০ দেশের র্যাংকিংয়ে আন্তর্জাতিক উম্মুক্ততায় বাংলাদেশ এগোনোর পরিবর্তে আরও পিছিয়ে গেছে। ১০৪তম থেকে নেমে গিয়ে অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১১৪তম। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ৩৪তম, শ্রীলঙ্কা ৭৭তম ও নেপাল ১০২তম। মালদ্বীপের মতো ছোট একটি দ্বীপরা®্র¡ের মোট জাতীয় আয়ের ৭০ শতাংশই পর্যটন-শিল্প থেকে আসে। মালদ্বীপের জিডিপির ২৮ শতাংশ এবং বৈদেশিক বিনিময় প্রাপ্তির ৬০ শতাংশেরও বেশি আসে পর্যটনশিল্প থেকে। বাংলাদেশ পর্যটনশিল্প পিছিয়ে পড়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমনÑনিরাপত্তা, পর্যটন স্পটগুলোতে যাতায়াত সমস্যা প্রভৃতি। তবে যেটি তার চেয়েও বড় সমস্যা তা হলো যথাযথ পর্যটন বিপণনের অভাব। সহজ কথায় পর্যটন বিপণন একটি বিপণন কৌশল, যা পর্যটন পণ্য এবং পরিষেবা যেমন গন্তব্য, হোটেল এবং পরিবহন পরিষেবা ইত্যাদির প্রচারের জন্য নির্দিষ্ট বিপণন পরিকল্পনা এবং কৌশল ব্যবহার করে। পর্যটন বিপণনের প্রধান চ্যানেল এবং টুলসের মধ্যে অন্যতম সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ই-মেইল মার্কেটিং অন্যতম। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ারে অংশগ্রহণ, দেশে বিদেশে ইভেন্ট করার মাধ্যমে দেশের পর্যটন স্পটগুলোকে দেশে-বিদেশে পরিচয় করার মাধ্যমে এই সেক্টরকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। এছাড়া দেশি-বিদেশি ব্লগারদের স্পন্সর করার মাধ্যমেও দেশের পর্যটন স্পটগুলো রিপ্রেজেন্ট করা যায়। দেশের এয়ারপোর্টগুলোতে ট্যুরিস্ট হেল্প বুথ করার মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিস্টদের ভ্রমণে উৎসাহিত করা সম্ভব। তাছাড়া ইন্টারন্যাশনাল টিভি চ্যানেল, ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সবাইকে অভিহিত করা সম্ভব। যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন বিপণন পারে দেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে।
শিক্ষার্থী
বিপণন বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়