বেতন ও ঈদ বোনাসসহ সব বকেয়া আগামী ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করার দাবি জানিয়েছেন পোশাক শ্রমিকরা। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আলাদা বিক্ষোভ সমাবেশে শ্রমিকদের দুটি সংগঠন এ দাবি জানায়। সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বলেন, পোশাক শ্রমিকরা সবসময়ই নির্যাতিত। অতীতেও যেকোনো উৎসবের আগে মালিকরা নানা অজুহাতে তাদের ঠকান। ঈদ বোনাস ও বকেয়া বেতন দিতেও দেরি করেন। কখনও ঈদের পরেও দেন। সুযোগ পেলে না দেয়ারও পাঁয়তারা করেন। শ্রমিকদের শ্রমেই কারখানা চলে বলে দাবি করে তারা ঈদ বোনাসসহ সব বকেয়া আগামী ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধের আহ্বান জানান।
আমরা লক্ষ করেছি, প্রতি বছরই ঈদের আগে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এবারও ব্যত্যয় ঘটেনি, এটি দুঃখজনক। সরকারের পক্ষ থেকেও মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে প্রাথমিক সভা করা হবে। তাতে শ্রমমন্ত্রী রুটিনমাফিক ‘ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ’ করার নির্দেশ দেবেন। কিন্তু কোনো বছরই সরকারের এ নির্দেশনা যথাযথ পরিপালিত হয় না। এ ধরনের দায়িত্বহীনতা নিন্দনীয়।
কোনো অজুহাত নয়, কভিডকালে সর্বাপেক্ষা বেশি প্রণোদনা পেয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প। এখন পোশাক শ্রমিকদের বঞ্চিত করা উচিত হবে না। শ্রমিকরা সারাবছর আগ্রহ নিয়ে আশায় বুক বাঁধেন দুটি ঈদে পূর্ণাঙ্গ বোনাস পাবেন বলে। কিন্তু মালিকরা নানা অজুহাতে বোনাস না দেয়ার পাঁয়তারা করেন। শ্রমিকারও মানুষ, তাদের ইচ্ছা হয় প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দে ঈদ কাটাতে। ইচ্ছা হয় সন্তানকে একটি নতুন জামা কিনে দিতে। কিন্তু মালিকদের চাতুর্যে তা সম্ভব হয় না।
কভিডকালে ক্রয়াদেশ কমেছে, এটি সত্য। কিন্তু এরই মধ্যে পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন ঈদ সামনে রেখে শ্রমিকদের বেতন-ভাতার প্রশ্নে কোনো ধরনের ওজর-আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কারখানা চলমান রাখতে অন্য সব খরচই চালানো যাবে, কিন্তু শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের প্রশ্ন এলেই মালিকেরা ‘অক্ষম’ হয়ে যাবেন, এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
ঈদের আগে শ্রমিকেরা যাতে বেতন-বোনাস পান, সে লক্ষ্যে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বিদ্যমান আইন তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের উৎসব ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন সুরক্ষা দেয়নি। প্রতিবছর ঈদের আগে কিছু কারখানার মালিক শেষ মুহূর্তে কারখানা বন্ধ করে উধাও হন। ঈদের পরে বেতন-ভাতা শোধ করে কারখানা চালু করেন তারা। এমন অপকৌশল বন্ধের চেষ্টা করতে হবে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানদের বৃহত্তম উৎসব ঈদ সন্নিকটে। কালক্ষেপণ না করে এখনই সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠকের উদ্যোগ নিতে হবে। সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে সব পক্ষের বৈধ স্বার্থ নিশ্চিত বেতন-বোনাস প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হলে বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব।