নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র শবেবরাত ঘিরে আবারও রাজধানীর বাজারে গরুর মাংসের দাম আরেক দফা বেড়েছে। শবেবরাতের অজুহাতেই গত তিনদিনে বিভিন্ন বাজারে মাংস বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্মঘটের পরের তিন মাসে এখন গরুর মাংসের দামের ব্যবধান প্রায় ২০০ টাকা দাঁড়িয়েছে। সরকারের নজরদারির অভাবকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা বাজারে যথেচ্ছা দাম বাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে এমন অভিযোগ ভোক্তাদের।
গত ফেব্রুয়ারিতে মাংস ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের আগেও রাজধানীতে ৪০০ টাকায় মিলতো গরুর মাংস। তবে এরপর প্রতি কেজি এক লাফে ৫০০ তে উঠে যায়। আর শবেবরাতের আগে বুধবার থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত রাজধানীতে মাংস ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
রামপুরা বাজারের বেকারি মালিক এজাজ উদ্দিন বলেন, পবিত্র একটা দিন। অনেকেই মাংস-রুটি খায়। সেই সুযোগ অসাধুভাবে কাজে লাগিয়েছে এসব মাংস ব্যবসায়ী। এরা আসলে কয়েক মাস আগে থেকেই নানা টালবাহানা করে মাংসের দাম বাড়াচ্ছে। সরকারও এদের সুযোগ দিচ্ছে। বাজারে মোবাইল কোর্ট করে এদের জেল জরিমানা করা হোক।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, শবেবরাতে মাংসের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু সে অনুযায়ী গরু সরবরাহ হচ্ছে না। তাই মাংসের দাম বেড়েছে। গরু কিনতে বেশি খরচ হওয়ায়ই তারা বেশি দামে মাংস বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এক ব্যবসায়ীর এমন মন্তব্যের সময় সেখানে উপস্থিত কয়েক ক্রেতা প্রতিবেদককে বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা করেই মাংসের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। গরুর মাংসের কোনো সরবরাহ ঘাটতি নেই। প্রতিটি বাজারে প্রচুর গরু জবাই হয়েছে। দীর্ঘদিন এসব ব্যবসায়ীর অন্যায় সহ্য করায় এসব ব্যবসায়ী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ও এলাকায় দেখা গেছে, সেদিন বাজারের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার মোড়ে প্রচুর গরু জবাই হয়। মোড়ে মোড়ে অস্থায়ী দোকানের সংখ্যাও কম নয়। সকাল থেকে গরুর মাংসের দোকানগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। যেসব দোকানে প্রতিদিন একটি-দুটি গরু জবাই হতো, সেখানে সেদিন পাঁচ থেকে ছয়টি গরু জবাই হয়েছে। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
তবে এলাকাভেদে সবখানেই মাংসের দামের পার্থক্য ছিল চোখে পড়ার মতো। ছোট বাজারগুলোসহ এলাকার অস্থায়ী দোকানে কেজিপ্রতি মাংস বিক্রি হয় ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকায়। আর রাজধানীর কারওয়ানবাজার, তালতলা, সেগুনবাগিচা, কল্যাণপুর ও মোহাম্মদপুরের বাজারে গতকাল প্রতি কেজি মাংস বিক্রি হয়েছে ৫৫০ টাকায়। আবার রামপুরা, মগবাজার বাজারে মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্তও। এদিকে গতকাল শুক্রবারেও বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংসের সেই চড়া ভাব অব্যাহত থাকে।
রামপুরা বাজারে মাংস কিনে ফেরদৌসী হুসাইন বলেন, এক কেজি মাংসে ৫০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। এটা কেমন কথা। যে যার মতো বিক্রি করছে, দেখার কেউ নেই। আমরা যেমন বাধ্য হয়ে আজ মাংস কিনছি, ব্যবসায়ীরাও বাধ্য করে বেশি দাম নিচ্ছে।
শবেবরাতে বাড়তি দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, বুধবার গাবতলী পশুর হাটে লুটের মতো খাজনা আদায় করা হয়েছে। একটি গরুতে পাঁচ হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি খাজনা নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা খাজনাসহ নানা জুলুমের শিকার হচ্ছে। তারা লোকসান ঠেকাতেই বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করছে।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবায়ন না হলে রোজার শুরুতে ফের ধর্মঘটের চিন্তা করছে মাংস ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর স্থায়ী পশুরহাট গাবতলীর ইজারাদারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ফেব্রুয়ারিতে কয়েক দিন ধর্মঘট করেছিলেন মাংস ব্যবসায়ীরা। সে সময় তাদের দাবি পূরণ হয়নি। এরপরও গত ৩০ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে পুনরায় ধর্মঘটের হুমকি দিলেও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন।
মাংস ব্যবসায়ীরা এখন বলছেন, ধর্মঘটে যাওয়ার বিষয়ে রমজানের আগের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। এরপর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। রবিউল আলম বলেন, আমরা বাণিজ্যমন্ত্রী এবং ঢাকার দুই মেয়রের দিকে তাকিয়ে আছি। বাণিজ্যমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন আমাদের সমাধান করে দেবেন। ২০ মের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মাংস ব্যবসায়ীদের বৈঠকের কথা রয়েছে। দাবিগুলো পূরণ না হলে আবার ধর্মঘট ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই।
Add Comment