গতকালের পর
রোগীর উপসর্গ শুনে ও মলদ্বার পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় করেন। মলদ্বার না দেখে শুধু সমস্যা শুনে চিকিৎসা করা উচিত নয়। একটি গ্লাভস পরা আঙুল বা একটি অ্যানোস্কোপ (শেষ প্রান্তে ক্যামেরা লাগানো একটি পাতলা নল) ঢুকিয়ে চিকিৎসকরা পায়ুনালি পরীক্ষা করে থাকেন। ফিশারের অবস্থান দেখেও এর সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে জানা যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিগময়ডোস্কোপি, কোলনস্কোপি প্রভৃতি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। লোকলজ্জায় এ রোগকে চেপে রাখা মোটেও ঠিক নয়। মলদ্বারে অ্যানাল ফিশারের কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা উচিত বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। প্রাথমিকভাবে কয়েক সপ্তাহের চিকিৎসায় এই রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ৯৫ শতাংশ রোগী অপারেশন ছাড়া ভালো থাকে। তবে কিছু ক্রনিক রোগীর ক্ষেত্রে সার্জারি বা অপারেশনের প্রয়োজন হয়।
সহায়ক খাবার: মূলত সহজপাচ্য এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক এমন খাদ্য এই রোগ উপশমে সহায়ক। এজন্য আঁশসমৃদ্ধ শাকসবজি, দানাশস্য, মটরশুঁটি, শিম, ইসবগুলের ভুসি প্রভৃতি খেতে পারেন। তরলজাতীয় খাবার, পর্যাপ্ত পানি (তিন-চার লিটার), ফলের জুস প্রভৃতি পান করুন। সাইট্রাস বা লেবুজাতীয় ফল, পাকা কলাসহ তাজা ফল খেতে পারেন।
হিপ বাথ ও উষ্ণ পানিতে গোসল: এক গামলা কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ বা পভিসেপ দ্রবণ মিশিয়ে মলত্যাগের পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট নিতম্ব ডুবিয়ে বসে থেকে সিজ বাথ বা হিপ বাথ নেয়া যায়। এতে জটিলতা অনেকাংশে কমে। দিনে কয়েকবার উষ্ণ পানিতে ১০-২০ মিনিট গোসল করলেও মাসল রিলাক্স হয়।
জীবনযাপনে কিছু নিয়মকে অভ্যাসে পরিণত করলে রোগীরা ভালো থাকতে পারেন। যেমনÑক. কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা; খ. মলদ্বার সব সময় শুষ্ক রাখার চেষ্টা করা; গ. যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করা; ঘ. পর্যাপ্ত ফাইবার বা আঁশজাতীয় খাবার গ্রহণ; ঙ. মাংসজাতীয় (গরু/খাসি) খাবার এড়িয়ে চলা; চ. পপকর্ন ও চিপসজাতীয় খাবার পরিহার করা; ছ. পায়খানার বেগ এলে চেপে না রেখে দ্রুত মলত্যাগ করা; জ. অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মলত্যাগের অভ্যাস ত্যাগ করা; ঝ. দীর্ঘক্ষণ কমোডে বসে না থাকা; ঞ. পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া; ট. অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করা; ঠ. নিয়মিত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করা; ড. দৈনিক ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রভৃতি।
অধ্যাপক ডা. সাহাদত হোসেন শেখ
চেয়ারম্যান, কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ
বিএসএমএমইউ