প্রতিনিধি, যশোর: শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে অসঙ্গতি সংক্রান্ত শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের শিক্ষক সম্রাট কুমার দেকে সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক পদে অবনমন করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে যবিপ্রবির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের ৭২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারির কারণে সদস্যদের অনেকে জুম অ্যাপে এবং অনেকে সশরীরে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
রিজেন্ট বোর্ডের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাধারণ আচরণ, শৃঙ্খলা ও আপিল-সংক্রান্ত বিধি অনুযায়ী সম্রাট কুমার দে গুরুদণ্ড প্রাপ্য হওয়ায় তাকে বর্তমান পদ থেকে নি¤œপদে বা নি¤œতর বেতনক্রমে অবনতকরণ এবং আগামী দুই বছর তিনি সহকারী অধ্যাপকের জন্য পদন্নোতির আবেদন করতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভার শুরুতে রীতি অনুযায়ী যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক
ড. মো. আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীও যেন ঝরে না পড়ে এবং কোনো ক্লাস যেন মিস না করে, এ জন্য শারীরিক ও ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে আগামী বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে আমরা ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং সিস্টেম’-এ চলে যাচ্ছি। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬টি বিভাগের প্রত্যেকটিতে ডিজিটাল ক্লাসরুম স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করি, এ পদ্ধতিতে আমরা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিবান্ধব, দক্ষ, যোগ্য ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।
গতবারের মতো এবারও যবিপ্রবি গবেষণায় তার ধারাবাহিক সাফল্য বজায় রেখেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক উপাচার্য বলেন, গবেষণা প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এলসভিয়ারের স্কোপাস ইনডেক্সে ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে যবিপ্রবি এবারও প্রথম স্থান অর্জন করেছে। আমাদের গবেষণা কর্মের ৪২ দশমিক ছয় শতাংশ কিউ-১ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সাইটেশন ইম্প্যাক্টে আমরা বর্তমানে তৃতীয় অবস্থানে আছি। তবে উল্লেখ্য যে, গত পাঁচ বছরের ডেটার গড়কে হিসেবে ধরে এ র্যাংকিং প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি শুধু গত দুই বছরের ডেটার ভিত্তিতে র্যাংকিং করা হতো, তাহলে আমাদের অবস্থান আরও এগিয়ে থাকত। গবেষণাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, গবেষণাসামগ্রী সহজলভ্যকরণ ও গবেষণায় শিক্ষকদের উৎসাহিত করার জন্য নানা পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
যবিপ্রবি উপাচার্য ও রিজেন্ট বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় সশরীরে ও ভার্চুয়ালি আরও উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুল মজিদ, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন-৩) সৈয়দা নওয়ারা জাহান, সাভারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ।
আরও ছিলেন সাভারের পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এসএম আসাদুজ্জামান, যশোরের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাওছার উদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম শাহি আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির।
এছাড়া ছিলেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এমএ রশীদ, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমির হোসেন, যবিপ্রবির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান, কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. বিপ্লব কুমার বিশ্বাস, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ।
সভায় ছিলেন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন, সরকারি এমএম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. হাসান সরোওয়ার্দী, সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আশরাফ-উদ-দৌলা, রিজেন্ট বোর্ডের সচিব ও যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব প্রমুখ।