যমুনায় পানি বৃদ্ধি, ভাঙনে বিলীন ৫০ বসতবাড়ি

অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ: উজানের পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি শহর রক্ষা হার্ডপয়েন্ট এলাকায় ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেখা দিয়েছে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুরে তীব্র ভাঙন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে নদীতীরবর্তী অঞ্চলের শত শত ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। সঠিক সময়ে নদীতীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ শুরু না করাকে দায়ী করছেন বিলীন হওয়া বসতবাড়ির পরিবার ও স্থানীয়রা।

একই সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও খাল-বিলে পানিও বাড়তে শুরু করেছে। এতে নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহ ধরে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে জালালপুর ইউনিয়নের উত্তরপাড়ায় প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

বিলীন হওয়া বসতবাড়ির মালিক ওমর আলী, পলাশ মন্ডল, মন্টু শেখ, চাঁন মিয়া, আব্দুস সালাম, শান্তা মিয়া, রহিমা খাতুন, বাবু শেখ, রমিজ উদ্দিন, কালা চাঁন, আব্দুল আলীমসহ অনেকের বাবা-দাদার বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একইসঙ্গে গাছপালা ও জমিজমাও চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষগুলো নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করছে। বর্তমানে তারা কোথায় যাবে, কোথায় থাকবে, তার নেই কোনো নিশ্চয়তা।

ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো ব্যক্তিরা জানান, রাক্ষুসী যমুনার ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি যে চোখের পলকে তাদের সহায়-সম্বল নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। ঘরবাড়ি সরানোর একটু সময়ও পাওয়া যাচ্ছে না। সঠিক সময়ে ঠিকাদার বাঁধ নির্মাণের কাজ না করায় মুহূর্তের মধ্যে বাড়িঘর, জমিজমাসহ সারাজীবনের সহায়-সম্বল নদীর মধ্যে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, প্রমত্তা যমুনার ভাঙন থেকে জালালপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা রক্ষা করতে ২০২১ সালে ৬৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনার পশ্চিম তীরের ছয় কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও পরবর্তীকালে কাজ বন্ধ করে দেয় তারা। এ কারণেই ভাঙন থেকে মুক্ত হচ্ছে না এই অঞ্চল।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মহির উদ্দিন বলেন, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে শুরু হয়েছে ভাঙন। প্রতিদিনই নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ বসতবাড়ি ও জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। গত সাত দিনের মধ্যে প্রায় ৫০টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার বলেন, ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে উজানের পাহাড়ি ঢলে অসময়ে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। ভাঙন রোধ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

রণজিৎ কুমার আরও বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ভাঙনের কবলে পড়েছে শাহজাদপুরের জালালপুর, আরকান্দি, ব্রাহ্মনগ্রাম ও পাচিল এলাকার মানুষ। এ বছর দফায় দফায় যমুনার পানি হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে ভাঙনে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও গাছপালাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে যথেষ্ট চেষ্টা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। পানি কমলে কাজ শুরু করা হবে। 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০