টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় যমুনায় জেগে ওঠা চরের মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘নদী থেকে বালি উত্তোলন করতে সরকারিভাবে কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি। বালির ঘাটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু পরে রাতের আঁধারে আবার তারা বালির ঘাট চালু করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে এসব বালির ঘাট বন্ধে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
বালি উত্তোলনের ফলে নদী-তীরবর্তী গ্রামের মানুষের বসতভিটা, আবাদি জমি ও রাস্তা ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি।
গতকাল রোববার শেয়ার বিজে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের কুঠিবয়ড়া থেকে নলীন বাজার পর্যন্ত সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড গাইড বাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু সেই গাইড বাঁধের কাছ থেকে অপরিকল্পিতভাবে এক্সক্যাভেটর দিয়ে বালি মাটি কাটা হচ্ছে। জগৎপুরা এলাকার প্রায় ৫০০ মিটারের মধ্যে পাঁচটি বালির ঘাট তৈরি করে ট্রাকযোগে বালি-মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালি মাটি কাটার ফলে বন্যার সময় নির্মিত বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ এসব বালির ঘাট।
অবস্থাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা যায়, আমরা ঠিক বুঝতে পারি না। বালি দখলের বিষয়টি অবহিত আছেন, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং জেলা প্রশাসকও। উভয়েই শেয়ার বিজকে বলেছেন, ‘বাঁধের পাশে যারা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
একদল কথিত প্রভাবশালী নির্বিচারে বালি উত্তোলনের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করবে, আর অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে ফেলা হলে বন্যার সময় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। গুটিকয়েক স্বার্থান্ধ লোকের জন্য এভাবে সাধারণ মানুষের সর্বনাশ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নির্বিচারে বালি উত্তোলন করলে নদীর গতি পরিবর্তিত হয় এবং নদীর দুই পাড় ভেঙে যায়। অর্থাৎ নদী থেকে বালি উত্তোলনের ফলে প্রকৃতিরও ক্ষতি হচ্ছে। তাই অবিলম্বে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। গৃহনির্মাণে বালি অপরিহার্য উপাদান। বালি উত্তোলন বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু এটিকে নিয়মকানুনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। যমুনা নদীতে যে গভীরতায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, তার থেকে বেশি গভীর করে বালি মাটি কাটা হচ্ছে। এতে বন্যা হলেই ভেঙে পড়বে বাঁধ।
বালি উত্তোলনের কারণে যাতে নদীভাঙন না হয়, সে লক্ষ্যে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনের কারও আসকারা ছাড়া গাইড বাঁধের নিকটবর্তী স্থান থেকে বালি উত্তোলন সম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করি। প্রশাসনের উচিত হবে, এলাকাবাসীর অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। তদন্তসাপেক্ষ বালি ব্যবসায়ী চক্রের কাছ থেকে সুযোগ নেয়া ব্যক্তিদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।