অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ ; একদিকে চলছে ভাঙন, অন্যদিকে চলছে ড্রেজার মেশিনে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন। ফলে দুই সপ্তাহ ধরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আরকান্দি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তীব্র ভাঙনে অর্ধশত বাড়িঘর ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে।
ভাঙনের তাণ্ডবে দিশাহারা হয়ে পড়েছে নদীরপাড়ের প্রায় শত শত পরিবার। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে ছাপড়া তুলে বাস করছি। এতে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষেরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভাঙনপ্রবণ এলাকার ১০০ থেকে ১২০ গজ দুরে ডাম্পিংয়ের জন্য জিও ব্যাগে বালি ভরাট করতে নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা থেকেই বালি উত্তোলনের জন্য ড্রেজার মেশিন বসিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠিকাদার। এতে জিও ব্যাগ ফেলার দু-এক দিন পরেই আবার সেখানে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। তাদের মতে, এভাবে নদীর ভাঙনরোধ সম্ভব না।
মঙ্গলবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১৫ দিন ধরে উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আরকান্দি এলাকায় যমুনা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি ভিত্তিতে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয়। তবে জিও ব্যাগ ভরাট করতে ভাঙন এলাকার কাছ থেকেই ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক দিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ভাঙনরোধে নদীর পাড়ে বালির বস্তা ফেলার কাজ শুরু করলেও তা কাজে আসছে না। কারণ যেসব স্থানে বস্তা ফেলা হচ্ছে, দুদিন না যেতেই সেখানেই আবার ভাঙন দেখা দিচ্ছে। যমুনায় বিলীন হওয়া এলাকার ১০০ থেকে ১২০ গজের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে বস্তা ফেলার কয়েক দিন না যেতেই আবার ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও ভাঙন রোধ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণগ্রামের নাজমা খাতুন আব্দুল কাদের, ইয়াহিয়া, জহুরুল ইসলাম, এমদাদুল হক মিলন, আরকান্দি গ্রামের মেহেদী হাসান, হালিমা খাতুন ও রেমান সরকার বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বস্তা ফেলার কাজ না করে পানি বৃদ্ধি হলে বস্তা ফেলা শুরু করে। দু থেকে তিন দিন না যেতেই তা আবার ভেঙে যমুনায় বিলীন হয়ে যায়। ফলে এ বস্তা ফেলা কোনো কাজেই আসছে না। অপরদিকে ঠিকাদারকে বালি সরবরাহের নামে এলাকার প্রভাবশালীরা প্রতিদিন ১৫-২০টি ট্রলারে করে বালি বিক্রি করায় এ ভাঙনের তাণ্ডব আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এতে ভাঙনের তীব্রতা আরও বাড়ছে।
তবে ভাঙন এলাকায় বস্তা ফেলার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত প্রতিনিধি খোরশেদ আলম, জয়নাল সরকার ও ফজলু ব্যাপারী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করে বস্তায় ভরে নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে। কোথাও বালি বিক্রি করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাকের ফোনে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। এ কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
শাহজাদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, ভাঙন এলাকা থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলনের বিষয়টি জানার পর খুকনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবকে সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন বলেন, ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। এতে দ্রুতই ভাঙন দূর হবে। তবে ওই এলাকা থেকে যদি ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করা হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ভাঙন এলাকার পাশ থেকে বালি উত্তোলন করে জিও ব্যাগে ভরে তা ডাম্পিং করা হলে আবার ভাঙন দেখা দেবে। ঠিকাদার এমন কাজ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।