শরীফ আহমদ ইন্না, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে বর্ষা মৌসুমে প্রমত্তা যমুনা নদীর ভাঙন নদীপারের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। জেলার নদীতীরবর্তী পাঁচ উপজেলার শত শত ঘরবাড়ি, বসতভিটা, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন রোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম। আর নদীগর্ভে বাড়িঘর হারানো মানুষদের সরকারিভাবে বাড়িঘর নির্মাণ করে পুনর্বাসনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা
আবদুর রহিম।
জেলার কাজিপুর থেকে চৌহালী উপজেলা পর্যন্ত যমুনা নদীর ৮০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে চলছে ব্যাপক ভাঙন। চলতি বছর চৌহালী উপজেলার নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্প এক বছরে ১৫ বার ভেঙেছে। ভাঙন নদীপারের মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাটবাজার, দোকানপাট, বিভিন্ন শক্ত কাঠামোসহ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
২০১৫ সালে যমুনা নদীর ভাঙন থেকে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী রক্ষায় ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সাত কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়। বাঁধটির প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়। এ অবস্থায় গত বন্যায় বাঁধটিতে ১১ দফা ধস নামে।
গত চল্লিশের দশকে কাজিপুর উপজেলার আমন মোহর, চর কাজিপুর, মাইজবাড়ী, ঢেকুরিয়া, জগৎগঞ্জ, দোয়েল, শুভগাছা, ট্যাংলাহাটা, শাহজাদপুর উপজেলার পাচিল, কৈজুড়ী, মনাকোষা, দামুয়াপাড়া, সাহেবপাড়া, কচুয়া, গুপিয়াখালি, ভাটপাড়া, লহিন্দকান্দি, জগতলা (একাংশ), মৌকুড়ি ও চৌহালী উপজেলার পশ্চিম খাস কাউলিয়া, খাস ধলাই, মুরাদপুর, রেহাই কাউলিয়া, খানপাড়া, চৌদ্দরশি, খাস পুকুরিয়া, খাস বেলদারপুর, সদর উপজেলার সয়দাবাদ (আংশিক), মেছরা, কাওয়াকোলা, রতনকান্দি (আংশিক), ছোনগাছা-সহ (আংশিক) অর্ধশতাধিক গ্রাম যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যেতে বসেছে।
সেইসঙ্গে হাজার হাজার একর আবাদি জমি, লক্ষাধিক ঘরবাড়ি, দালানকোঠা, স্টেডিয়াম, কোর্টকাচারি, তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়, ডাকবাংলো ও হাটবাজার বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। সর্বস্ব হারানো মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া এসব মানুষের বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছে পার্শ^বর্তী বগুড়া, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন চর ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, সিরাজগঞ্জ আদিকাল থেকে যমুনায় বিলীন হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। গত বছর ভাঙনকবলিত মানুষের মধ্যে দুই বান্ডিল করে টিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৮৫ বান্ডিল টিন ও প্রতি বান্ডিলে তিন হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ বছরও বরাদ্দ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে কথা হয়েছে। যাদের জমি আছে ঘর নেই, তাদের পুনর্বাসনে সরকারি পরিকল্পনা রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্রায় ৮০ কিলোমিটার। এই অঞ্চলের প্রায় অধিকাংশ নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ শেষ হয়েছে। কাজিপুর ও সদরে নদীভাঙন রোধ করা হয়েছে। ভূমিও পুররুদ্ধার করা হয়েছে। কাজিপুরে সাত কিলোমিটার ও শাহজাদপুরে ছয় কিলোমিটার অংশ ফাঁকা রয়েছে। এই দুটি কাজের প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই স্থানে কিছু কিছু নদীভাঙন রয়েছে। কাজিপুরের শুভগাছায় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৬৩০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। এটি বাস্তবায়ন হলে নদীভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। শাহজাদপুরেও তীব্র নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক দিনের তুলনায় যমুনা নদীর পানি কমে যাচ্ছে, এজন্য ভাঙনের তীব্রতা একটু বেশি। এখানেও প্রায় ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এখানে যমুনা নদীতে ড্রেজিংসহ নদীতীর সংরক্ষণে কাজ করা হবে।

Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 11:43 pm
যমুনার ভাঙনে আতঙ্কিত সিরাজগঞ্জবাসী
সারা বাংলা ♦ প্রকাশ: