যমুনা ব্যাংকে খেলাপি সালতা ক্যাপিটাল

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামভিত্তিক তাহের গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘সালতা ক্যাপিটাল লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচার ব্রোকারেজ হাউস। প্রতিষ্ঠানটি নিজের এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচালনায় যমুনা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয়। কিন্তু সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় দ্বিতীয় বারের মতো খেলাপিতে পরিণত হয়। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে খেলাপি ঘোষণা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। খেলাপি আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আগামী ২০ অক্টোবর বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে।
যমুনা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা সূত্রে জানা যায়, সালতা ক্যাপিটাল লিমিটেড ব্যবসা পরিচালনায় যমুনা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয়। কিন্তু সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এতে গত বছরের ৩০ নভেম্বর খেলাপি গ্রাহকে পরিণত হয়। তখন সালতা ক্যাপিটাল লিমিটেডের কাছে সুদাসলসহ খেলাপি পাওনার পরিমাণ মোট ৮৮ কোটি আট লাখ ৬৫ হাজার ১৯০ টাকা। এরপর চলতি বছরে দ্বিতীয় বারের মতো ৩১ আগস্ট খেলাপি গ্রাহকে পরিণত হয়। এ সময়ে সালতা ক্যাপিটাল লিমিটেডের কাছে সুদাসলসহ খেলাপি পাওনার পরিমাণ মোট ৯২ কোটি ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৯ টাকা। এ পাওনার বিপরীতে যমুনা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার কাছে বন্ধকিতে আছে নগরীর বাকলিয়া মৌজায় ১১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ জমি, চান্দগাঁও মৌজায় কালুরঘাট রোডে প্রায় ১২ কাটার জমি ও স্থাপনাসহ পেট্রোল পাম্প এবং মাছ ধরার একটি ট্রলার। পাওনা আদায়ে এসব বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রয় করার উদ্যোগ নেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আগামী ২০ অক্টোবর নিলামের দিন নির্ধারণ করছে ব্যাংক। এতে আগ্রহী ক্রেতা ও প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের জন্য দরপত্র বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আহ্বান করা হয়।
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলেন, সালতা ক্যাপিটাল লিমিটেড আমাদের খেলাপি গ্রাহকে পরিণত হয়েছে। এ ঋণের টাকা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানের সুদাসলে ৯২ কোটি টাকা খেলাপি। এ খেলাপি পাওনা পরিশোধে তাদের তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি উদ্যোক্তাদের দেখাও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাদের অনেক ভূ-সম্পত্তি আছে। প্রয়োজন হলে অর্থঋণ আদালতেও মামলা করে পাওনা আদায় করা হবে।
তাহের গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম বাকলিয়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মরহুম আবু তাহের ১৯৬০ সালের আবাসন ব্যবসার মাধ্যমে ব্যবসায়িক শুরু করেন। স্বাধীনতার পর পদ্মা অয়েলের পেট্রোল পাম্পের ডিলারশিপ ব্যবসায় আসেন। মৃত্যুর পর তার সন্তান আবু সালেহ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, আবু সাইদ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, গাজী আতিকুর রহমান ব্যবসার হাল ধরেন। তাদের নেতৃত্বে পেট্রোল পাম্প, ব্রোকারেজ হাউজ, ফিশিং, আবাসন, পোশাক কারখানা, টি অকশন ইত্যাদি ব্যবসার মাধ্যমে তাহের গ্রুপ গড়ে ওঠে। বর্তমানে এ গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েদ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ প্রকাশ এসএম শহিদুল্লাহ, পরিচালক (অর্থ) শাহজাহান ইকবাল এবং পরিচালক হিসেবে আতিকুর রহমান দায়িত্ব পালন করছেন।
কর্মকর্তারা বলেন, তাহের গ্রুপের ব্যবসা আগের মতো নেই। এ গ্রুপের পোশাক ব্যবসা আগেই বন্ধ হয়েছে। পাম্প, আবাসন, ব্রোকারেজ ব্যবসা চালু আছে। আর মাছ ধরার দুটি জাহাজ ছিল। মূলত মাছ ধরার জাহাজে বিনিয়োগের জন্য ঋণটা নেয়া হয়। কয়েক বছর আগে আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েদ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ অস্ট্রেলিয়া স্থায়ী হয়েছেন বলে শুনেছি। চেয়ারম্যান শাহজাহান ও পরিচালক আতিক দেশে আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সালতা ক্যাপিটালকে আসলে দ্বিতীয় বারের মতো খেলাপি করা হয়নি। মূলত তখন রিট থাকার কারণে বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়। এখন রিট খারিজ যাওয়ায় খেরাপির কারণে আবার নিলাম করা হচ্ছে। তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধে কোনো ধরনের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে আমরা খেলাপি পাওনা আদায়ে আইনের আশ্রয় নেব।
অন্যদিকে সালতা ক্যাপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েদ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর ব্যবহƒত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাহের গ্রুপের অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, তিনি অফিস করেন না।
উল্লেখ্য, সালটা ক্যাপিটাল চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদিত স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার হাউস। যার সদস্য নং ২২। প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেটে একাধিক শাখা আছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০