সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামভিত্তিক তাহের গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সালতা ক্যাপিটাল লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনাবেচার ব্রোকারেজ হাউস। প্রতিষ্ঠানটি নিজের এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচালনায় যমুনা ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয়। কিন্তু সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপিতে পরিণত হয়। এ খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আগামী ২৯ ডিসেম্বর বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে এ গ্রুপের ব্যবসায়িক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না।
যমুনা ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখা সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সালতা ক্যাপিটাল লিমিটেডের কাছে সুদাসলসহ খেলাপি পাওনার পরিমাণ মোট ৮৮ কোটি আট লাখ ৬৫ হাজার ১৯০ টাকা। আর এ পাওনার বিপরীতে যমুনা ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখার কাছে বন্ধকিতে আছে নগরীর বাকলিয়া মৌজায় ১১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ জমি, চান্দগাঁও মৌজায় কালুরঘাট রোডে প্রায় ১২ কাটার জমি ও স্থাপনাসহ পেট্রোল পাম্প এবং মাছ ধরার একটি ট্রলার। আর পাওনা আদায়ে এসব বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রয় করা হবে। এ নিলাম কার্যক্রম সম্পূর্ণ করার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আগামী ২৯ ডিসেম্বর নির্ধারণ করছে। এতে আগ্রহী ক্রেতা ও প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের জন্য দরপত্র বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আহ্বান করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকটিতে কর্মরত একজন কর্মকর্তা বলেন, সালতা ক্যাপিটাল লিমিটেড আমাদের খেলাপি গ্রাহকে পরিণত হয়েছে। এ ঋণের টাকা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানের সুদাসলে ৮৮ কোটি টাকা খেলাপি। এ খেলাপি পাওনা পরিশোধে তাদের তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এমন কি উদ্যোক্তাদের দেখাও পাওয়া যাচ্ছে না। শুনেছি তাদের এমডি আবু সায়েদ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা হয়েছেন। তবে তাদের অনেক ভূ-সম্পত্তি আছে। আর প্রয়োজন হলে অর্থঋণ আদালতেও মামলা করে পাওনা আদায় করা হবে।
তাহের গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম বাকলিয়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মরহুম আবু তাহের ১৯৬০ সালের আবাসন ব্যবসার মাধ্যমে ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করে। আর স্বাধীনতার পর পদ্মা অয়েলের পেট্রোল পাম্পের ডিলারশিপ ব্যবসায় আসেন। মৃত্যুর পর তার সন্তান আবু সালেহ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, আবু সায়েদ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ এবং আতিকুর রহমান ব্যবসার হাল ধরে। তাদের নেতৃত্বে পেট্রোল পাম্প, ব্রোকারেজ হাউস, ফিশিং, আবাসন, পোশাক কারখানা, টি অকশন ইত্যাদি ব্যবসার মাধ্যমে তাহের গ্রুপ গড়ে ওঠে। বর্তমানে এ গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েদ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ প্রকাশ এসএম শহিদুল্লাহ, পরিচালক (অর্থ) শাহজাহান ইকবাল এবং পরিচালক হিসেবে আতিকুর রহমান দায়িত্ব পালন করছেন।
এ গ্রুপের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘তাহের গ্রুপের ব্যবসা আগের মতো নেই। এ গ্রুপের পোশাক ব্যবসা আগেই বন্ধ হয়েছে। পাম্প, আবাসন, ব্রোকারেজ ব্যবসা চালু আছে। আর মাছ ধরার দুটি জাহাজ ছিল। মূলত মাছ ধরার জাহাজে বিনিয়োগের জন্য ঋণটা নেয়া হয়। আর কয়েক বছর আগে আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েদ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ অস্ট্রেলিয়া স্থায়ী হয়েছেন বলে শুনেছি। তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। আর চেয়ারম্যান শাহজাহান ও পরিচালক আতিক দেশে আছেন।’
এ বিষয়ে জানার জন্য যমুনা ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহর ব্যবহƒত মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, ‘আমি একটি অনুষ্ঠানের আছি। পরে সময় করে কথা বলব।’
অন্যদিকে সালতা ক্যাপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েদ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর ব্যবহƒত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে তাহের গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) ও সালতা ক্যাপিটাল লিমিটেডের কম্পোইন্স অথরিটি শাহজাহান ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তারও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, সালতা ক্যাপিটাল লিমিটেড চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদিত স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার হাউস, যার সদস্য নং-২২। প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেটে একাধিক শাখা আছে।